সরকারি দপ্তরে দুর্নীতি কমাতে দুদকের ১২০ সুপারিশ

0
309

খবর ৭১ঃ সরকারি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণেই অধিকাংশ দুর্নীতি সংঘটিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় সেবায় বিঘ্ন ঘটে। ফলে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও সেবায় দীর্ঘসূত্রতা হয়। এ কারণে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে দৈনন্দিন কর্মপদ্ধতির উন্নয়ন, নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন ও কাজে গতিশীলতা আনার পরামর্শ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি দপ্তর ও সেবা সংস্থাগুলোর দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে সেগুলো প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশও দিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থাটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন গতকাল সোমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাতে তুলে দেয়। ওই প্রতিবেদনে ভূমি ব্যবস্থাপনা, পাসপোর্ট প্রদান সহজীকরণ, স্বাস্থ্য, আয়কর, হিসাবরক্ষণ অফিস, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, সরকারি নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা, মন্ত্রণালয়ের কার্য উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং জনহয়রানির সম্ভাব্য উৎসসমূহ চিহ্নিত করেছে। এসব দুর্নীতি-অনিয়ম বা হয়রানি দূর করতে ১২০টি সুপারিশ তুলে ধরছে।

এসব খাতের মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে। তারা বলেছে, সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থার নিয়োগে দুর্নীতি-অনিয়ম কিংবা স্বজনপ্রীতির কথা সবাই জানেন। তাদের মতে, নিয়োগ দুর্নীতিকে আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির আঁতুড়ঘর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তাই নিয়োগ দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে দুদক।

দুদকের সুপারিশ, সংবিধান অনুসারে একাধিক কর্ম কমিশন সৃষ্টি করে এর মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে নিয়োগ প্রত্যাশীদের হয়রানি, নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার শ্রম, সময় ও অর্থ এবং দীর্ঘসূত্রতা সর্বোপরি দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি নেতিবাচক কর্মকাণ্ড কমে যাবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়ারা নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল কর্মচারী হিসেবে প্রজাতন্ত্রের কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পদ্ধতিতে কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, অনুদান, উন্নয়ন তহবিলের নামে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ থাকে। এর পরিবর্তনের সুপারিশ করছে দুদক। তারা মনে করে, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। একইভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত একক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি সমন্বিত ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চালাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ম্লান করে দিচ্ছে বলে মনে করে দুদক। এ জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দুদকের বক্তব্য, সর্বোচ্চ মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীরাই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ পাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত ভর্তি নিয়োগ-নীতিমালা প্রণয়ন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেতে পারে।

দেশের পুলিশি সেবার প্রাণ থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের পরিদর্শক (নন-ক্যাডার) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। সেবাপ্রার্থীরা থানা থেকে কাঙ্খিত মাত্রার সেবা পাচ্ছেন না মর্মে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়। কোনো ক্ষেত্রে আচরণগত, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া যায়। এসব সমস্যা সমাধানে দুদক মনে করে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) ক্যাডারের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ অথবা অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়নের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পুলিশের প্রতি জন আস্থাকে আরও বিকশিত করা এবং উপজেলা পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে কার্যকর সমন্বয়ের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

দালালের দৌরাত্ম্য, যাচাই কার্যক্রমে পুলিশের ঘুষ গ্রহণ, জনশক্তির স্বল্পতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির সুযোগ গ্রহণ পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির অন্যতম প্রধান উৎস। তাই পাসপোর্ট দেওয়ার পদ্ধতির উন্নয়ন ও সহজ করতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে দুদক। এর মধ্যে অন্যতম হলো গেজেটেড অফিসারের হাতে আবেদনপত্র ও ছবি সত্যায়ন করার প্রক্রিয়া বিলুপ্ত করা এবং পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা সময়াবদ্ধ অথবা বিলুপ্ত করা। এ ছাড়া পদ্ধতিগত সংস্কারের কথাও বলেছে তারা। ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি এবং দীর্ঘসূত্রতা রোধেও নানা সুপারিশ করেছে দুদক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here