ধর্ষণের পর চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয় শাহীনুরকে

0
258

খবর৭১ঃ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর নির্দয়ভাবে হত্যা করা নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়ার সেই মর্মান্তিক ঘটনা।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিরা পুলিশের কাছে মুখ খুলতে শুরু করেছে। রিমান্ডে স্বর্ণলতা বাসের চালক নূরুজ্জামান ও তার সহযোগী (হেলপার) লালন মিয়া পুলিশকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

তাদের কথামতো স্বর্ণলতা পরিবহনের যে বাসটিতে ঘটনা ঘটে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৪২৭৪) তা গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাসটির তিন জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলন্ত বাসের দরজা জানালা লাগিয়ে শাহীনুরকে ধর্ষণ করে তারা।

হেলপারকে গাড়ি চালাতে দিয়ে প্রথমে ড্রাইভার নূরুজ্জামান তাকে ধর্ষণ করে। এরপর হেলপার লালনসহ আরো দু’জন ধর্ষণ করে। শাহীনুর নিজেকে বাঁচাতে সজোরে তাদের কিল ঘুষিও মারে। ধর্ষণের পর তাকে গলাটিপে বা অন্য কোনো উপায়ে হত্যা করতে চেয়েছিল ধর্ষণকারীরা। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে মাথার খুলি ফাটিয়ে দিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় তারা।
তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে অন্য একটি বাসের কথা বলেছিল আসামিরা। সেই বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৬২৮৫) আগেই আটক করেছিল পুলিশ। তবে সেই বাসে ধর্ষণ বা হত্যার কোনো আলামত পায়নি তারা। এরপরই ড্রাইভার নূরুজ্জামান ও হেলপার লালনের কথায় পুলিশের সন্দেহ হয়। রিমান্ডের শুরুতে এলোমেলো কথা বলে আসামিরা। পরে তাদের আরো চাপ প্রয়োগ করা হয়। প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়ে তারা অপরাধ স্বীকার করে। আসামিদের কথামতো উদ্ধার করা হয়েছে শাহীনুরের ব্যাগের কাপড়-চোপড়, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সঙ্গে থাকা টেলিভিশনও। সেসব পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। তবে তৃতীয় ব্যক্তিটির নাম তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এই মুহূর্তে জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, ধর্ষণ ও হত্যার পর ধর্ষণকারীরা বিষয়টি সড়ক দুর্ঘটনা প্রমাণ করতে নাটক সাজিয়েছিল। ধর্ষণের পর শাহীনুরকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ার পর ধর্ষকরা নিজেরাই আবার ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে অনেক স্থানীয় মানুষও এগিয়ে আসে। কিন্তু ধর্ষকরা স্থানীয়দের জানিয়েছিল এয়ারফোনে গান শুনতে শুনতে মেয়েটি বাস থেকে পড়ে গেছে, আমরাই হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। তাদের কথা বিশ্বাসও করেছিল স্থানীয়রা। পরে অচেতন অবস্থায় শাহীনুরকে পিরোজপুর বাজারের সততা ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফার্মেসি থেকে মেয়েটিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললে স্বর্ণলতা বাসের স্টাফরা কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। আমরা একেবারেই নিশ্চিত যে শাহীনুরকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ’

ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ময়নাতদন্তে শাহীনুরকে ধর্ষণ ও হত্যার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের সময় সব বিষয় খুঁটিয়ে দেখেছি। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এটা নিশ্চিত। ধর্ষণের পর তার মাথার পেছনে প্রচণ্ডভাবে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। মাথার খুলির পেছনের অংশ দুই ভাগ হয়ে গেছে। মাথার ভেতর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

বাসের চালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯) ও হেলপার লালন মিয়াসহ (৩২) মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার তাদের আট দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
খবর৭১ /জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here