মুরগীর শরীরে এন্টিবায়োটিকে মানুষের ভয়াবহ ক্ষতি!

0
287

খবর৭১ঃ মুরগীকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নাই। অথচ প্রতিদিন সকালবেলা প্রায় ১৫-২০ কোটি মুরগিকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে। মুরগী যাতে নিরাপদে থাকে সেজন্য তার শরীরের এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

আর মুরগীর শরীর থেকে মাটিতে, পানিতে সেই এন্টিবায়োটিক যাচ্ছে, সেখান থেকে সেই এন্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার কাছে চিঠির মতো জেনেটিক ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছে!

এরপরে যে অঞ্চলে এভাবে মুরগীকে খাওয়ানো হচ্ছে এন্টিবায়োটিক, ওই ব্যাকটেরিয়ার ট্রান্সফার জিন দিয়ে আক্রান্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো পরবর্তীতে যখন মানুষকে আক্রমণ করছে, তখন ওই ওষুধ এবং ওই ওষুধের মতো অন্যান্য ওষুধ আর কাজ করছে না। এটা একটা ভয়ংকর চিত্র।

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার নিয়ে গত শনিবার একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতেএসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে, যিনি রেজিস্টেন্স হলেন, তিনি যেখানেই থাকুক, এই আক্রান্ত মানুষটা তো মুভ (চলাফেরা) করছে। সেই সাথে ব্যাকটেরিয়াও মুভ করছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মহা আতংকের নাম। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে এবং রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে।

ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ)-এর আইসিইউতে মৃত্যু মানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটাই প্রকাশ করে। দেশের সব হাসপাতাল থেকে আসার পর এখানে এসে মৃত্যুবরণ করে। তাই এখানে মৃত্যুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

‌কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে যে, যারা মৃত্যুবরণ করছে, তাদের শরীরে পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোর ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই অধিকাংশ এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স থেকে। এটা হচ্ছে আমাদের জন্য ভয়ংকর খবর। তাহলে সারা দেশজুড়েই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের অবস্থাটা খুবই খারাপ।

ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ধারাবাহিকভাবেই গত ১৫ বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশের এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। যে এন্টিবায়োটিকগুলো ৫ থেকে ১০ বছর আগে খুবই কার্যকর ছিল, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই কাজ করছে না।

প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষকে ভুল এন্টিবায়োটিক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে অপ্রয়োজনে বা ভুল এন্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে, এরকম একটা দেশে এন্টিবায়োটিক ডেভেলপ করাটা খুব স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় দুই-আড়াই লক্ষ ফার্মেসি আছে, এই দুই-আড়াই লক্ষ ফার্মেসি যদি একদিনে অন্তত ৫টি করে এন্টিবায়োটিক দেয়, তাহলে দেখা যায় যে, প্রতিদিন তারা ১০ থেকে ১৫ লক্ষ এন্টিবায়োটিক দেয়, যার মধ্যে খুব অল্প একটা অংশের সত্যিকারের প্রয়োজন। একজন দোকানদারের পক্ষে কোন এন্টিবায়োটিকটা সত্যিকারের প্রয়োজন, কোনটার প্রয়োজন নেই, এটা বুঝার সুযোগ নাই। এসব নিয়ে তারা কিছুই জানে না।

তিনি বলেন, রেজিস্টার্ডডাক্তার ছাড়া কারো প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা যাবে না, তাহলেইএগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here