উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ আয়করের অর্জন’ শ্লোগানে নড়াইলে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী আয়কর মেলা। সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ডিসি আনজুমান আরা। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, খুলনা কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মো. মুহিতুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন এসপি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম), পৌর মেয়র মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস, সদর ইউএনও সালমা সেলিম, আয়কর আইনজীবি সমিতির সভাপতি শরীফ হুমায়ুন কবীর, চেম্বার অব কমার্স নড়াইলের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান, শ্রেষ্ঠ করতাদা মো. ওয়াহিদুজ্জামান, সহকারী কর কমিশনার মো. আমিনুল হক, কর পরিদর্শক সমীরণ সিকদার প্রমুখ। মেলায় টিন রেজিষ্ট্রেশন/রি রেজিষ্ট্রেশন, নতুন করদাতাদের টিন সনদ প্রদান, নাম্বার খোলা, রির্টান দাখিল, ব্যাংক বুথে আয়কর দেয়া, আয়কর বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হবে।
নড়াইলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতী নদীতে বিলীন খোলা আকাশের নিচে স্যাঁতসেঁতে নরম মাটিতে পাঠদান!
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:(১৫ নভেম্বর) ২৭৪: নড়াইলের পারআমডাঙ্গা গ্রামের আস্তাইল-আমডাঙ্গা নতুনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গাছতলায় ও খোলা ছাপড়ায় চলছে পাঠদান। দেড় মাস আগে বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, ১৯৮৬ সালে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামবাসী। ২০০০ সালে সরকারি বরাদ্দে বিদ্যালয়ে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন তৈরি হয়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছিল শিশুদের খেলার মাঠ। আস্তাইল, পারআমডাঙ্গা, শিকারপুর ও ইকরাইল গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ভবনটি নদীতে বিলীন হয়। সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। এরপর গ্রামবাসী ছোট্ট একটি ছাপড়া তুলে দিয়েছেন। তাই এখন পাঠদান কার্যক্রমের ভরসা। নিচেয় নরম মাটি ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। খোলা জায়গা, তাই বেঞ্চে ধুলাবালিতে ঠাসা। শৌচাগার ও নলকূপ নদীতে। বিদ্যালয়ের কাগজপত্র, ফাইলপত্র, চক-ডাস্টার রাখা হয় পাশের মসজিদে। এক দুর্বিষহ পরিবেশে চলে পাঠদান কার্যক্রম। কথা হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, সুচিত্রা রানী পাল, মিতালী রানী বিশ্বাস ও মিতা খানমের সঙ্গে। তাঁরা জানান, বৃষ্টি বা একটু জোরে বাতাস হলে ক্লাসে বসা যায় না। শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাশাপাশি গাদাগদি করে বসায় মনোযোগ নষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অন্তরা, পূর্ণিমা, অনিক ও লিপন বলে, সামনে সমাপনী পরীক্ষা, দুশ্চিন্তায় আছি। অভিভাবক তরিকুল ইসলাম, মান্নান সরদার ও আকিদুল মোল্লা জানান, এ অবস্থায় ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক প্রকাশ কুমার সাহা, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকক্ষকে বারবার অবহিত করছি। ইউএনও মুকুল কুমার মৈত্র জানান, বিদ্যালয়ের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।# ছবি সংযুক্ত
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত কবিয়াল নড়াইলের বিজয় সরকার’র ডুমদি গ্রামের সড়কটি আজও অবহেলিত
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:(১৫ নভেম্বর) ২৭৪: উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত চারণ কবি বিজয় সরকারের ডুমদি গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি আজও অবহেলিত। দীর্ঘকাল ধরে সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে বিজয় ভক্ত ও গ্রামবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউপির এক নিভৃত পল্লী ডুমদি গ্রাম। এ গ্রামেই আধ্যাত্মিক পুরুস কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মায়ের নাম হিমালয় অধিকারী। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। বাল্যকাল থেকে কবিয়াল বিজয় ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। প্রথাগত শিক্ষায় মাধ্যমিকের গ-ি না পেরোলেও কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা করে নিজেই পরিবেশন করতেন। ১৯২৯ সালে তিনি কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবিয়াল বিজয় সরকারের গানের আসরে উপস্থিত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ। তাঁরা গান শুনে মুগ্ধ হন এবং তাকে আর্শীবাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ‘ভারতীয় ভাষা পরিষদ’ তাকে সংবর্ধিত করেন। এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি একাধিকবার ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারুশিল্পী এসএম, সুলতানসহ অসংখ্য গুণীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন। বিজয় সরকার প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদী গান, লোকগীতি, ইসলামী গান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমি গান। ভারতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৩ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। মহান এই শিল্পীর জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছরই কবির বসতভিটায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। কিন্তু মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কটি পাকা না হওয়ায় ভক্তসহ মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডুমদি গ্রামের অধীর কুমার জানান, নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের সবচেয়ে অবহেলিত গ্রাম হলো ডুমদি। এই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি। কবি বিজয় সরকারের এই বাড়িতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তদের আগমন ঘটে। কিন্তু সড়কের এই অবস্থা দেখে সবাই হতাশা প্রকাশ করেন। ডুমদি গ্রামের গৃহবধূ নিলীমা রায় জানান, বর্ষাকালে বিজয় সরকারের বাড়িতে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা এসে সড়ক খারাপ দেখে ফিরে চলে যায়। ডুমদি গ্রামের ছেলে মেয়েরাও বর্ষার সময় স্কুলে যেতে পারে না। অনেকে নৌকা যোগে পারাপার হয়ে থাকে। পাশ্ববর্তী হোগলাডাঙ্গা গ্রামের ইন্দ্রোজিত বিশ্বাস বলেন, কবিয়াল বিজয় সরকারের বসতভিটায় যেতে দুই কিলোমিটার সড়ক কাচা রয়েছে। সড়কটি চিকন এবং উঁচু নিচু হওয়ায় চলাচলে ভীষণ সমস্যা হয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলসহ গ্রামবাসী ভ্যান নিয়েও চলাচল করতে পারে না। বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক আকরাম শাহীদ চুন্নু বলেন, ‘বিজয় সরকার একজন কণ্ঠযোদ্ধা। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কবি গান গেয়ে যে টাকা পেতেন তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খরচ করতেন। বিজয় সরকারের রচিত গানগুলি সংরক্ষণের পাশাপাশি তার গ্রামের বাড়িতে যাবার সড়কটি দ্রুত পাকাকরণ প্রয়োজন। প্রতিবছরই জন্ম ও মৃত্যুদিবসের কর্মসূচিতে সড়কের সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন হলেও কেন যে পাকা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। দ্রুত সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানাই। বাঁশগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চারণ কবি বিজয় সরকারের বাড়িতে যাবার রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য ডিসিসহ এলজিইডি নড়াইল অফিসে যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আশা করি কবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্রুত সড়কটি পাকা করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এলজিইডি নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সোমদ্দার বলেন, আমি কিছুদিন আগে নড়াইলে যোগদান করেছি। এখনও জেলা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হতে পারি নাই। কবি বিজয় সরকারের গ্রামের বাড়ির সড়কটি কি অবস্থায় আছে দেখে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, গুণীশিল্পী কবিয়াল বিজয় সরকারের গ্রামের বাড়ির সড়কটি এতোদিনেও পাকা না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আমি গতমাসে নড়াইলে যোগদান করেছি। সড়কটি যাতে দ্রুত পাকাকরণের ব্যবস্থা করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।# ছবি সংযুক্ত
নড়াইলে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বড়কর্তার কারণে বেতন পাচ্ছে না কর্মচারীরা
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:(১৫ নভেম্বর) ২৭৪: নড়াইল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মো. জাকাত আলী কর্মস্থলে যোগদান না করায় বেতন পাচ্ছেন না ১৭ কর্মচারী। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, জানা যায়, কেন্দ্রের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী ২ মাস এবং উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের ৮ প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারী এক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর বিল সীটে স্বাক্ষর না করলে তারা বেতন পাবেন না। সরকারি আদেশে ৩ অক্টোবর ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মো. জাকাত আলীকে গাইবান্ধা থেকে নড়াইলে এবং নড়াইলের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর ইকবাল মাহমুদকে ঝিনাইদহে বদলি করা হয়। যুব উন্নয়ন অধিদফতর মহাপরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. আ. হামিদ খান ২৫ অক্টোবরের মধ্যে মো. জাকাত আলীকে নড়াইলে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় ২৮ তারিখ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। নড়াইল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর ইকবাল মাহমুদ ঝিনাইদহে যোগদান করলেও গাইবান্ধা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মো. জাকাত আলী নড়াইলে যোগদান করেননি। নড়াইল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক এ এম সাইফুল আনাম বলেন, যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি বেতন পাচ্ছেন না তারা সরকারের বরাদ্দ থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। নতুন অফিসার না আসায় তারা বেতন তুলতে পারছেন না। তবে নড়াইলে তার যোগদানের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। শুনেছি নতুন এ কর্মকর্তা ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করে কর্মস্থলে যোগদান করবেন।