সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রকল্প বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস স ালন পাইপ লাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার এ প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত গ্যাস স ালন পাইপ লাইন নির্মিত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উত্তরের প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ায় শিল্প উদ্যোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করে এ অ লে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় সারাদেশের ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব অনুমোদিত প্রকল্পের অন্যতম প্রকল্প বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস স ালন পাইপ লাইন প্রকল্প।
সূত্র জানায়, উত্তরের ৪ জেলার উপর দিয়ে ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের অবহেলিত উত্তর জনপদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগ সুবিধা প্রসারিত করাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সরবরাহের আওতায় আনা হবে। উত্তরের বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৩০ ইি ব্যাসের এক হাজার পিএসআইজি চাপ সম্পন্ন গ্যাস স ালন পাইপ লাইন বসানো হবে। এর মাধ্যমে প্রকল্পের আওতাভূক্ত জেলা-উপজেলায় ৫০০ এমএমএসসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হবে। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পেট্রোবাংলার অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড (জেটিসিএল)। চলতি অর্থ বছর থেকে ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প ও স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে রংপুর জেলা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরের রংপুর, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড ও ইকোনমিক জোনসহ সৈয়দপুর অ লে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহে গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। তার এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট ফেসিনেশন কোম্পানীর (আইআইএফসি) প্রকৌশলীরা কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। তিন দফায় এ অ লের জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এরপর সমীক্ষা রিপোর্ট জেটিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
সূত্র মতে, অনুমোদিত পাইপ লাইন বগুড়া জেলার সদর থেকে রংপুর অ লের ১০ উপজেলার উপর দিয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত নির্মিত হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে গ্যাস ব্যবহারে জ্বালানী খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও শিল্প-কারখানা সম্প্রসারণ, শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে বিনিয়োগের উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া এ অ লে আর্থিক লাভের পাশাপাশি বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জীবন যাত্রার মান আরও উন্নত হবে।
জানতে চাইলে, উত্তর জনপদের বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি ছিলো উত্তরা লে গ্যাস সরবরাহ। দেরীতে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। কারণ উত্তরা লে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় শিল্প কারখানার বিস্তার থমকে ছিলো। সচল কারখানাগুলোও রুগ্ন হওয়ার দশায় ছিলো। কারণ এ অ লের শিল্প কারখানা পণ্য উৎপাদনে গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মার খাচ্ছিল। ফলে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। গ্যাস আসলে ওই সমস্যার অবসান হবে। এতে এ অ লে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। কর্মসংস্থানও বাড়বে সমানভাবে। তিনি গ্যাস স ালন পাইপ লাইন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দেন।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর গাউসিয়া মেজর অটো ফ্লাওয়ার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তফা জানান, আমাদের এখানে গ্যাস না থাকায় নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে না। আমি নিজেও নতুন শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েও নিশ্চুপ রয়েছি। গ্যাস স ালন পাইপ লাইন চালু হলে আমার মত অন্যরাও বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। আগামীতে সৈয়দপুরের চিত্র পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্প নগরীর আমিনুল গ্রুপের মালিক বিশিষ্ট শিল্পপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, সৈয়দপুরসহ নীলফামারী অ লে জ্বালানী নির্ভর পণ্য ও প্রকৌশল শিল্প কারখানা করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। যে কারণে উত্তরে এমন শিল্প কারখানা হাতেগোনা মাত্র। গ্যাস স ালন পাইপ লাইন প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ায় শিল্প কারখানা স্থাপনের বন্ধ্যাত্ব কাটবে। অবহেলিত উত্তরা ল সমৃদ্ধ উত্তরা লে পরিণত হবে। এখন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ নিয়ে শিল্প কারখানা স্থাপন করবেন। তিনি গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সৈয়দপুরের গুরুত্ব অনুধাবন করে সৈয়দপুরে গ্যাস সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুই দফা ডিও লেটার দেন।