নড়াইল-২ আসন: আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের গলারকাটা এখন জোটের প্রার্থীরা !

0
574

ইকবাল হাসান,লোহাগড়া(নড়াইল) প্রতিনিধিঃ
নড়াইল-২ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের গলারকাটা এখন জোটের প্রার্থীরা ! দেশের প্রধান এ দুটি রাজনৈতিক দলের দুই ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন জোটের প্রার্থীদের নিয়েই বেশি টেনশানে সময় পার করছেন। প্রধান দুটি দলের নেতা-কর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে এমনই ধারণা পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখা ৩ লক্ষ ২ শ’ ৩৭জন। এর মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুটি দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে লোহাগড়ার মানুষকে। ভোটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ আসনের জয়-পরাজয়টা নির্ভর করে লোহাগড়া উপজেলার ভোটের উপরই। যে কারনে দলীয় মনোনয়নটাও এ উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে এসেছে বারবার।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের শরীফ খসরুজ্জামান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন(বর্তমানে তিনি মৃত)। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ সভাপতি (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু শেখ হাসিনা এ আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় উপনির্বাচনে বিএনপি জোটের পক্ষে ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি শহিদুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেনা সমর্থিত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ)এসকে,আবু বাকের আওয়ামীলীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত (দশম জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি শেখ হাফিজুর রহমান (নৌকা প্রতিক) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চাইছেন। যদিও প্রথমে ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে আসিফুর রহমান বাপ্পিকে মনোনয়ন দেয়া হয়। পরে আসনটি জোটকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মূলত ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই নড়াইল-২ আসনটিতে বড় দুটি দলের জোট রাজনীতি তথা জোটের প্রার্থীরা ভর করা শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার জোট কে দেয় এ আসন। যে কারনে এবারো প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেকটা আতংকে সময় পার করছেন। এবং যার যার কৌশল মতো দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবার জন্য জোর লবিং করছেন।
এ আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি শেখ হাফিজুর রহমান বেশ জোরেশোরে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। শেখ হাফিজুর রহমান সরকারের(তার আমলের)নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে দাবি করেন যে, এ আসনটি আবারো বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে দেয়া হচ্ছে। এবং তিনিই দলীয় প্রার্থী থাকছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এলাকার আরো ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করবার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
অপরদিকে,বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের পক্ষে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির(এনপিপি) চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ডঃ ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আগেভাগেই গ্রীন সিগনাল পেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থক সহ নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী কোন প্রার্থী না থাকায় এ্যাডভোকেট ডঃ ফরিদুজ্জামান ফরহাদই বিএনপি জোটের প্রার্থী থাকছেন তা প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে। এ্যাডভোকেট ডঃ ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ভোটের মাঠ আমাদের দখলে আছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আমরাই জিতবো।
এদিকে, এলাকাঘুরে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে কথাবলে জানা গেছে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে ভবণ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির নির্মাণ সহ ব্যাক্তি টাকায় কোটি কোটি টাকার নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড করবার কারনে সদালাপী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক শিল্পপতি শেখ মোঃ আমিনুর রহমান হিমুকে প্রার্থী হিসাবে পেতে চাইছেন তারা।
বিশেষ সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের একাধীক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতা এবার দলীয় মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হবার কথা চিন্তাভাবনা করছেন। এমনকি কেউ কেউ নিজ সমর্থকদের কাছে ঘোষণাই দিয়েছেন যে, মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন। আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা আপাতত ৪/৫ জন হলেও শেষমেষ তারা কি করবেন তা সময়ই বলে দেবে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক, আওয়ামীলীগের অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতা বলছেন, আমাদের গলার কাটা এখন জোট !

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here