মধুমতি, চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলাসহ ১০ নদী বেষ্টিত ধুকছে নড়াইলের ৭৮ খাল থাকলেও এখন এর চিহৃ পর্যন্ত নেই!

0
279

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
প্রভাবশালীরা কয়েক বছর ধরে এসব খালে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করছে ধুকছে নড়াইলের ৭৮ খাল মধুমতি, চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলাসহ ১০ নদী বেষ্টিত নড়াইল জেলা। এছাড়া ছোট-বড় মিলে ৫৭টি বিল রয়েছে। নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, এসব বিলের ফসল উৎপাদনে সেচ কার্যক্রম, মৎসসহ অন্যান্য কাজের জন্য প্রাকৃতিকভাবে এক সময় শতাধিক খালের অস্তিত্ব ছিলো।
সেখান থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী খাতা-কলমে ৭৮টির খাল থাকলেও সেগুলোও দ্রুত দখল হয়ে যাচ্ছে। এসব খালের সঙ্গে জেলার নদীগুলোর সংযোগ ছিল। অথচ প্রভাবশালীরা হাসপাতাল, অফিস, বাড়ি নির্মাণের জন্য যাতায়াতের পথ তৈরি করতে গিয়ে খালগুলো চিরতরে বন্ধ করে দিচ্ছে। অনেকে আবার মাছ চাষ করছে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন সড়কের ওপর পুরোনো ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ করার সময় অস্থায়ীভাবে ডাইভারশন সড়ক তৈরি হলেও ব্রিজ নির্মাণ শেষে সেই সড়কের মাটি ঠিকমতো অপসারণ করা হচ্ছে না। ফলে খাল-বিলের পানি সময়মতো প্রবাহিত হতে না পারায় বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি এবং ফসল চাষ ব্যাহত হচ্ছে। সদরের সীতারামপুর গ্রামের কৃষক শিশুপল বিশ্বাস আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ৪ বছর আগে সীতারামপুর ব্রিজ নির্মাণের সময় সীতারামপুর খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে ডায়ভারশান সড়ক তৈরি করা হয়।
ব্রিজটি চালু হলেও ডাইভারশন সড়ক ঠিকমতো অপসারণ করা হয়নি। ফলে একদিকে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে নিচু জায়গায় জলাবন্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় একশ একর জমির রবি ও বোরা আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, নড়াইল-যশোর সড়কের পার্শ্বে তুলারামপুর খাল, মুলিয়া খাল, জিয়া, শাহাবাদ-নয়নপুর এবং বড়েন্দার খালের প্রায় দেড় শতাধিক জায়গায় হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি তৈরি করতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নড়াইলের কাজলা নদীর সঙ্গে এসব খালের স্লুইচগেট দিয়ে সংযোগ রয়েছে। প্রয়োজনের সময় এ নদী থেকে বিলে পানি প্রবেশ এবং বের করে দেয়া হয়। কলমিলতা পানি ব্যবস্থা দলের সভাপতি শান্ত বলেন, প্রভাবশালীরা কয়েক বছর ধরে এসব খালে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করছে। অথচ এসব খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরে। কেউ আবার শাপলা, কলমি শাক তুলে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব জলাশয়ে পচানি দেয়া পাটের আঁশ ছাড়িয়ে দরিদ্র নারী ও পুরুষ মৌসুমী বেকারত্ব দূর করে থাকে।
নড়াইল পৌরসভার ভাটিয়া, যুব উন্নয়ন, এলজিইডি অফিসের পশ্চিম পাশ দিয়ে বাহিরডাঙ্গা হয়ে শাহাবাদ পর্যন্ত ৭ কি.মি একটি খালের অর্ধেক জায়গা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দখলে চলে গেছে। চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের সীমানন্দপুর-গোয়ালবাথান এলাকায় নবগঙ্গা নদী থেকে সদরের হাওয়াইখালি ব্রিজ পর্যন্ত ৬ কি.মি একটি খাল থাকলেও উৎস মুখ প্রায় ২ কি.মি খালের অস্তিত্ব মুছে গেছে। এদিকে গোয়ালবাথান গ্রামে একটি পুল ভেঙে রাস্তা করে খাল বিলীন করে দেয়া হয়েছে। সদরের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের ফুলসর ও আসগর-বাহার বিলের মধ্য দিয়ে একটি খাল ভবানিপুর-রামসিধি হয়ে বাগডাঙ্গা প্রায় ৬ কি.মি অতিক্রম করে চিত্রা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ভবানিপুর ও রামসিধি গ্রামের ভেতরে খালের অনেক জায়গা দখলদারদের কবলে রয়েছে।
সদরের শহাবাদ ইউনিয়নের গারোচোরা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন (৪৮) আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, গারোচোরা গ্রামের পার্শ্বে চিত্রা নদী থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত ৩ কি.মি একটি খাল ছিল। তবে অধিকাংশ জায়গা এখন দখল হয়ে গেছে। শাহাবাদ পীর সাহেবের বাড়ির পূর্ব পাশ দিয়ে চিত্রা নদী থেকে একটি খাল ধোন্দা-ময়েলখালি বিলে গিয়ে মিশলেও অনেক জায়গাই এখন ব্যক্তির দখলে।
সদরের বাঁশগ্রাম থেকে বগুড়া দিঘেলা হয়ে বালিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি কালি খালটির অধিকাংশ জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও আবার রাস্তা করায় খালের অস্তিত্বই নেই। নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের পাশ দিয়ে সীমাখালী থেকে হাওয়াখালী পর্যন্ত জিয়া খালের অস্তিত্ব এখন আর নেই। কোথাও শুধু রেখাটুকু রয়েছে। লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের দীননাথ পাড়া থেকে নলদী ইউনিয়নের বালিদিয়া পর্যন্ত কয়েক কি.মি একটি পুরোনো খাল থাকলেও এখন এর চিহৃ পর্যন্ত নেই।
সদরের সীতারামপুর গ্রামের কৃষক শিশুপল বিশ্বাস আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান,৪ বছর আগে সীতারামপুর ব্রিজ নির্মাণের সময় সীতারামপুর খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে ডায়ভারশান সড়ক তৈরি করা হয়। ব্রিজটি চালু হলেও ডাইভারশন সড়ক ঠিকমতো অপসারণ করা হয়নি। ফলে একদিকে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে নিচু জায়গায় জলাবন্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় একশ একর জমির রবি ও বোরা আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
নড়াইল বিএডিসি (সেচ) বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান,আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এখনও তালিকা তৈরি হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে কিছু মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে ভালো হয়। তারপরও বিষয়টি আমরা দেখছি।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here