অবশেষে বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নীতিমালা জারি

0
1209
অবশেষে বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নীতিমালা জারি

খবর৭১ঃ সরকার নির্ধারিত তালিকার বাইরে কোনো মেডিকেল সেন্টার বিদেশগামী কর্মীদের  স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারবে না। সরকারের বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত মেডিকেল সেন্টারের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে কোনো মেডিকেল সেন্টার অনুমোদন পেয়ে থাকলেও তাদেরকে নতুন নীতিমালার আওতায় পুনরায় আবেদন করতে হবে।

নির্ধারিত ছকে আবেদনের জন্য অফেরতযোগ্য ৫ হাজার টাকার ফি প্রদান ছাড়াও বাছাই কমিটি সম্মতি দিলে ৫ লাখ টাকা জামানত দিতে হবে। বিদেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করে ২০ আগস্ট এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এর আগে এ বিষয়ে ২০০৮ সালে নীতিমালা প্রকাশ করা হলেও সেটি আইনি জটিলতায় আটকে যায়। স্বার্থান্বেষী মহল ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আদালতের আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালাটি সময়োপযোগী সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে বিশদ সংশোধনীর কারণে বলা যায়, এটি একেবারে হালনাগাদ নতুন নীতিমালা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বিদেশগামী কর্মীদের সব ধরনের হয়রানি অনেকটা দূর হবে। সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে কেউ অতিরিক্ত ফি যেমন নিতে পারবে না, তেমনি টাকার বিনিময়ে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়ার পথ বন্ধ হবে।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যয় বিদেশগামী কর্মীদের সামর্থের মধ্যে রাখাসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য রিপোর্ট নিশ্চিত করতে সংশোধিত নীতিমালাটি প্রণয়ন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে নীতিমালাটি বাস্তবায়নে শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। যাতে হয়রানিমুক্তভাবে জনশক্তি রফতানি আরও বেগবান হয় সেদিকটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কাজে গুণগত মান নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’

নীতিমালার উল্লেখযোগ্য দিক : সরকার বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল সেন্টার নির্ধারণ করবে। সরকার নির্ধারিত তালিকার বাইরে অন্য কোনো মেডিকেল সেন্টার এর আওতাভুক্ত হবে না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত মেডিকেল সেন্টারের তালিকাপ্রাপ্ত আবেদন পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।

এ ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের কোনো মেডিকেল সেন্টার ইতিপূর্বে অন্য কোনো দেশে গমনকারী কর্মীদের পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক তালিকাভুক্ত হয়ে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানকেও এ নীতিমালার আওতায় নতুন করে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে। ৭ সদস্যের বাছাই কমিটির প্রধান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব।

বাছাই কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। ৩ সদস্যের আপিল কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। এছাড়া তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে মেডিকেল সেন্টারের বেশ কিছু যোগ্যতার শর্ত নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেডিকেল সেন্টারের অবস্থান ঢাকা মহানগরী, সকল বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ও লাইসেন্স থাকতে হবে। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরির মেডিকেল সেন্টারকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এক্স-রে ইউনিটের জন্য থাকতে হবে আণবিক শক্তি কমিশনের সনদ, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আধুনিক সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করে অনলাইনে নির্ভুল রিপোর্ট প্রদানের সক্ষমতা থাকতে হবে।

মেডিকেল সেন্টারে ন্যূনতম ৫০ জনের বসার সুব্যবস্থা রাখতে হবে। ডাক্তারি পরীক্ষার মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রেটিং অনুযায়ী হতে হবে। মেডিকেল সেন্টারের প্রতিটি বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো থাকতে হবে।

তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মেডিকেল সেন্টারের প্রতিটি কর্মীর স্বাস্থ্য সনদ থাকা বাঞ্ছনীয়। মেডিকেল রিপোর্টে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর ছবি সংযুক্ত করে সেখানে মেডিকেল সেন্টারের সিল ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ স্বাক্ষর থাকতে হবে। ডাক্তারি রিপোর্ট গোপনীয় তথ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা গ্রহণের ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানে বাধ্য থাকবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করবে। তবে কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো মেডিকেল সেন্টারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ আগে থেকে অব্যাহত থাকলে উক্ত মেডিকেল সেন্টারের জন্য ওই দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি বলবৎ থাকবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক মেডিকেল পরীক্ষার ফিসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। কোনো অবস্থাতে বাংলাদেশ সরকার কিংবা অন্য দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া যাবে না।

তালিকাভুক্ত মেডিকেল সেন্টারের বিরুদ্ধে অসততা বা অদক্ষতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে জামানত বাজেয়াপ্তসহ মেডিকেল সেন্টারের তালিকাভুক্তি দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তি বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। তালিকাভুক্ত মেডিকেল সেন্টারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্টে কোনো ভুল তথ্য, অসম্পূর্ণ অথবা অদক্ষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার কারণে কিংবা কর্মী বিদেশে পুনঃস্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বাংলাদেশে সম্পাদিত টেস্ট রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মেডিকেল সেন্টারের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট ৩ মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here