যে কারণে বাড়ছে সোনার দাম

0
573
যে কারণে বাড়ছে সোনার দাম

খবর৭১ঃ বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে সোনার দাম বাড়ছে। দেড় মাসে মূল্যবান এ ধাতুটির দাম পাঁচ দফা বেড়েছে। সর্বশেষ সোমবার ২২ ক্যারেটের সোনা ভরিপ্রতি ১ হাজার ১৬৭ টাকা বেড়ে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে, ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স সোনার দাম এক হাজার ৫২৫ ডলার ৯৯ সেন্ট উঠে, যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি আউন্স সোনা এক হাজার ৫৩৭ ডলারে বেচাকেনা হয়।

আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে অনিশ্চয়তা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার হিড়িক, ডলারের দাম পড়ে যাওয়া, বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা এবং হংকংয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা- এই ছয় কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ ক্ষেত্র মনে করে সোনা কিনছেন। এতে চাহিদায় বাড়তি চাপ পড়ায় ধাতুটির দাম বাড়ছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছে তাই তাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে বছরের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে আউন্সপ্রতি দাম বেড়েছে আড়াইশ’ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় একুশ হাজার টাকা। ভরিপ্রতি বেড়েছে আট হাজার টাকা। কিন্তু আমরা একবারে না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছি।’দেশের বাজারে দেড় মাসে সোনার দাম বেড়েছে পাঁচবার। এর মধ্যে চলতি মাসের ২৩ দিনেই বেড়েছে তিন দফা। ৭ আগস্ট বাজুস সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা কার্যকর হয় ৯ আগস্ট থেকে।

দাম বাড়ানোর ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ৫৫ হাজার ৬৯৫ টাকা, ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি ৫৩ হাজার ৩৬২, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি ৪৮ হাজার ৩৪৭, সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি ভরি ২৭ হাজার ৯৯৩ এবং ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা ১ হাজার ১৬৬ নির্ধারিত হয়। এর আগে ৫ আগস্ট আরেক দফা দাম বাড়ানো হয়। সে সময় ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা, ২১ ক্যারেট ৫২ হাজার ১৯৬ এবং ১৮ ক্যারেট ৪৭ হাজার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে সোনার দাম ২৭ হাজার ৯৯৩ টাকা এবং ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ ১৯ আগস্ট দাম বাড়ানো হয়। তখন থেকে ভরিপ্রতি ২২ ক্যারেট সোনা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকায়। জুলাই মাসে সোনার দাম দুই দফা বাড়ানো হয়। জানুয়ারি মাসেও দু’দফায় দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাজুস। ওই মাসে ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিপ্রতি ৪৮ হাজার ৯৮৮ টাকা ছিল। বর্তমানে ভরিতে প্রায় সাত হাজার টাকা বেড়েছে।

বাজুসের সাধারণ সম্পাদক জানান, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে। চীনের নানা ধরনের পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল, তখন চীন ডলার ছেড়ে দিয়ে সোনার রিজার্ভ বাড়িয়ে দেয়। এরফলে ডলারের দরপতন হয়। চীন সোনা কেনায় আন্তর্জাতিক বাজারে এই ধাতুটির সংকট তৈরি হয়ে দাম বাড়তে থাকে।

সোনার দাম সামনে কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সোনা আমদানি শুরু না হলেও যারা লাগেজে করে সোনা আনেন, তারাও তো আন্তর্জাতিক বাজারের দরেই কিনে আনেন। যারা রিসাইকেল করা সোনা কিনছেন তারাও ওই আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুসরণ করেন।’

ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে (স্পট মার্কেট) ২০১৩ সালের এপ্রিলে সোনার দাম আউন্সপ্রতি সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৩৪ ডলার ৩১ সেন্টে উঠেছিল। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩৭১ ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ২৯৪ ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৮৯ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৩৩ ডলার এবং ২০১৮ সালে ১ হাজার ৩৫৫ ডলার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে ঠেকতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক সংস্থা সিএমসি মার্কেটের প্রধান বাজার বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাকার্থি রয়টার্সকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here