দলীয় প্রতীকেই সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

0
466
দলীয় প্রতীকেই সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

খবর৭১ঃ
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকেই অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে এ তিন সিটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের নিজ এলাকায় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভোটারদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করছেন কেউ কেউ।

মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও কেউ কেউ বার্তা পাঠিয়েছেন। এর আগে কৌশলগত কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। তবে সে জায়গা থেকে সরে গিয়ে সিটি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একইদিনে ভোট হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেও।

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। সে হিসাবে আগামী বছরের শুরুতেই এ তিন সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দলটি। আগামীতে স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনেই অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নীতিনির্ধারকদের এমন ঘোষণার পরপরই সিটি কর্পোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসে। সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে এমনটা ধরে নিয়ে তারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

তিন সিটিতেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট, বিপণিবিতানে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে লিফলেট বিতরণ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।ডেঙ্গুজ্বরে মারা যাওয়াদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে তাদের বাসায়ও যাচ্ছেন। সম্প্রতি ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত বাড্ডার তাসলিমা বেগম রেনুর বাসায় যান তাবিথ আউয়ালসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। নিহতের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেয়ার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সিটি নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে কেউ অংশ নিতে চাইলে আমরা তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে বলে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন দল গোছানোর কাজ করছি। ঢাকাসহ তিন সিটি নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। এ ব্যাপারে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

অংশ নেব কিনা কিংবা নিলে স্বতন্ত্র না দলীয় প্রতীকে যাব সে ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে প্রায় এক যুগ মেয়র ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও উত্তরে তাবিথ আওয়াল।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের নির্বাচন করার সম্ভাবনা কম। তবে দলের হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে পারেন। দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের বদলে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে দলের একটি অংশ।
তাদের মতে, বিগত নির্বাচনে আব্বাসকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তার অুনপস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন আফরোজা। নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ ভোটারদের মন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

তাই এবার তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ভোটাররা ইতিবাচকভাবে নেবে বলে মনে করছেন অনেকে। আব্বাস দম্পতি ছাড়া দক্ষিণে মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা। এর আগে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বার্থে তিনি আর নির্বাচনে অংশ নেননি। ইশরাক হোসেন খোকা বলেন, আগামী সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই আমি দেখি না। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেব।

দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনে লড়ব। আমার বাবা অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। আমি প্রকৌশলী। ঢাকার যানজট নিয়েও পড়াশোনা করেছি। তাই বাবার পাশাপাশি আমার অভিজ্ঞতাকেও আমি কাজে লাগাতে পারব। ঢাকা আমাদের সবার প্রাণের শহর। এটিকে একটি সুস্থ, নিরাপদ, সবুজ ও উচ্চ মানসম্পন্ন জীবনযাত্রার শহর হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার লক্ষ্য। এজন্য নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞাননির্ভর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করব।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি উত্তরের ভোটে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। ওই নির্বাচনে নতুন মুখ হিসেবে উত্তরের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন তিনি। বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করলেও তাবিথ আউয়াল কয়েক লাখ ভোট পান। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়াল বলেন, দল নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা জানি না। অংশ নিলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেব। তবে দল নির্বাচনে অংশ নিলে এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারব বলে আশা করি।

তাবিথ আউয়ালের পাশাপাশি উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। ইতিমধ্যে তিনি প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময়ও করছেন। শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ২০ দলীয় জোট থেকে উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাই। প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু করেছি। আশা করি জোট বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।

তিনি বলেন, আমি বর্তমানে এলডিপিতে থাকলেও আমার রাজনীতি শুরু হয়েছে বিএনপির হাত ধরেই। ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। বিএনপির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আমার পরিচিতি রয়েছে। জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে বলে আশা করি। এর বাইরে বিএনপি থেকে মেয়র পদে লড়তে চান যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও বিএনপির সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হন। কিন্তু নির্বাচনের দিন সকাল ১০টায় দলের নির্দেশে ভোট বর্জন নিয়ে তাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মানতে তিনি বাধ্য ছিলেন। এ কারণে পরে তিনি বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আগামীতে এই সিটিতে বিএনপি নতুন প্রার্থী দেবে। সেক্ষেত্রে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন।

এছাড়া মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর ও কারাগারে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর নামও আলোচনায় আছে। ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করব। এখানে ৪১টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রস্তুতির কোনো সমস্যা নেই। জনগণ তো ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।তবে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট যেভাবে আগের রাতে ডাকাতি করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এ জন্য সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে জনগণের মনে একটা আতঙ্ক রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here