দুই জোট ছাড়াই পরবর্তী কর্মসূচি বিএনপির

0
485

খবর৭১ঃ ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠের আন্দোলনে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতারা। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবার দুই জোট ছাড়াই সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তাদের মতে, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী একটি দল হওয়া সত্ত্বেও গত ১০ বছরে জাতীয় রাজনীতিতে কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

তৃণমূল নেতাদের ধারণা, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট- এ দুই জোট গঠনের ফলে বিএনপিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সামনের দিনে সব কর্মসূচি এককভাবে করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তাদের পরামর্শকে হাইকমান্ড গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ এককভাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কর্মসূচি হবে বিএনপির ব্যানারে। যেখানে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়রসহ স্থানীয় নেতাকর্মী থাকবেন। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সমাবেশ বিএনপির নিজস্ব কর্মসূচি। এতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ এককভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে বিএনপি। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি জেলায় সমাবেশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে।

যেখানে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপির তৃণমূলের নেতারা দুই জোট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক জেলা শাখা নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠকে তৃণমূল নেতারা বলেন, দুই জোট বাদ দিয়ে এককভাবে চললে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতো না দল।

এ সময় তারা হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন, আগামী দিনে দল পুনর্গঠন করে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো কর্মসূচি দুই জোটের ব্যানারে নয়, বিএনপি এককভাবে পালন করাই উচিত। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করা যাবে।

নির্বাচনের পর থেকে দুই জোটেই অস্থিরতা চলছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এর আগে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলে যায় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর বিজেপি।

অন্যদিকে আরেক শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সংসদে যোগদানের বিরোধিতা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে না- এমন অভিযোগ তুলে ২৭ জুন আলাদা ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চের’ ঘোষণা দেন।

বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই তিনি পৃথক এই রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ঘোষণা করেন, যা নিয়ে বিএনপি ও এলডিপির দূরত্ব বাড়ছে। এই মঞ্চে জোটের শরিক কল্যাণ পার্টি, জাগপাসহ ছোট কয়েকটি দলও যুক্ত আছে।

এমন পরিস্থিতিতে দুই জোটের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার কার্যত কোনো তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না বিএনপির।

দলটির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়েই অনেকে জোট ছাড়বে- এটি আমাদের ভাবনায় ছিল। আবার তৃতীয় শক্তির প্রেক্ষাপট রচিত হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেও কেউ কেউ জোট ছাড়তে পারেন।

তাছাড়া জোট শরিকদের অনেকে এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের পক্ষে। কিন্তু বিএনপি মনে করে, সর্বশেষ নির্বাচনের পর উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে সেটি আর সম্ভব নয়। ফলে আপাতত ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পক্ষে দলটি।

ওই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, আমরা এখন দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে চাই। বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের পর আরও কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি মাঠে নামবে। এসব কর্মসূচি বিএনপির ব্যানারেই আমরা পালন করব।

বিএনপির বরিশাল বিভাগেরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির নেতৃত্বেই এই জোট হয়েছে।

বিএনপিকে ঘিরেই এই বলয়টা। জনবল বা নেতাকর্মী যাই বলি, সব তো বিএনপিরই। আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের নেতাকর্মীরাই তো মাঠে থাকে। জোটকে মূলত নির্বাচনী জোট বলা যায়।

এজন্য আমাদের সামনে দিনে যেসব কর্মসূচি, তা আমরাই পালন করব। সব কর্মসূচি দলের নেতাকর্মীরা সর্বশক্তি দিয়ে সফল করবে। তাতে কারও প্রয়োজন হবে না বলে আমরা মনে করি। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাশেম বকর যুগান্তরকে বলেন, ২০ জুলাই আমরা সমাবেশ করব। সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ।

প্রত্যাশা করছি, এ সমাবেশ হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, সুচিকিৎসা এবং নতুন করে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১৮ জুলাই বরিশাল থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করবে বিএনপি। ২০ জুলাই চট্টগ্রাম ও ২৫ জুলাই খুলনায় হবে এই সমাবেশ। ঈদুল আজহার আগেই দেশের ৮ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত দলটির।

ঢাকায় সমাবেশ হবে সবার পর। অনুমতি পেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশের আয়োজন করা হবে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের স্থানীয় নেতাদের এসব সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটাতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে নেতারা সমাবেশ সফল করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here