বাজারে এসেছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের টিকা

0
466

খবর৭১ঃ
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্সের ওষুধ কোম্পানি স্যানোফি-পাস্তুর উদ্ভাবন করেছে সিওয়াইডি-টিডিভি (কাইমারিক ইয়েলো ফিভার ডেঙ্গু টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু ভ্যাক্সিন)। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে এই ভ্যাক্সিনের ব্যবহার শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ টিকা অত্যন্ত কার্যকর বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে এই টিকাটি বাংলাদেশে এনেছে স্যানোফি-অ্যাভেন্টিস।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ টিকা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে টিকাটি স্যানোফি-অ্যাভেন্টিস এনেছে। ইতিমধ্যে এটি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদনও পেয়েছে।

২০১৫ সালে উদ্ভাবিত টিকাটি ২০১৬ সালে ফিলিপাইনের ডেঙ্গু আক্রান্ত আট লাখ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ টিকা ৭৬ শতাংশ কার্যকর। গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর ওপর টিকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

টিকা গ্রহীতাদের ৮০ ভাগ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দিলেও সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করে না। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এ টিকা সহজলভ্য করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৪ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২ হাজার ১৬৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জুনে ১ হাজার ৭৫৯ জন আর মে মাসে ১৯৩ জন ভর্তি হয়েছিল। রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫২ জন ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৮১ জন ৬ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হয়। একদিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তির রেকর্ড এটি।

জানা গেছে, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে টিকার তিন ডোজের একটি সার্কেল গ্রহণ করতে হয়। প্রথম ডোজ গ্রহণের ছয় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং এক বছর পর তৃতীয় ডোজ নিতে হয়। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এ টিকা মানবদেহে প্রয়োগের পর শরীরে এর (ডেঙ্গু) প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, যা মারাত্মক ডেঙ্গু বা প্রাণঘাতী জটিলতা প্রতিরোধে সক্ষম।

বিশেষ করে মানবদেহে ডেঙ্গুর যেসব অণু বহিস্থ এন্টিজেন হিসেবে কাজ করে, সেগুলো টিকায় সম্পৃক্ত থাকায় চারটি পৃথক সেরোটাইপের বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। আধুনিক রিকমবিনেট পদ্ধতিতে এ টিকা তৈরি করায় প্রাথমিকভাবে এর দাম কিছুটা বেশি।

তবে স্যানোফি-পাস্তুরের তৈরি টিকা বাংলাদেশে সহজলভ্য করার সুযোগ রয়েছে। কারণ স্যানোফি-পাস্তুরের এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে স্যানোফি অ্যাভেন্টিস কাজ করছে। ২০১৬ সালে ফিলিপাইনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার সময় এটির দাম ছিল ২০০ ডলার। এ টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা বা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে (এশিয়ার পাঁচটি দেশে ও ল্যাটিন আমেরিকার পাঁচটি দেশে) গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

যেখানে শিশু ও পূর্ণ বয়স্ক মানুষের (দুই থেকে ১৬ বছর) ওপর এটি প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগের এক বছর পর ফলোআপে দেখা গেছে, ৬০ ভাগ লোক আগে যারা ডেঙ্গুর যে কোনো সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়েছিল তাদের আর ডেঙ্গু হয়নি। ৮০ ভাগ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দিলেও সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করেনি।

এছাড়া ৯ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের যাদের এ টিকা দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ৯২ শতাংশের ডেঙ্গুর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। তবে অধিকতর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৯ বছর বয়সী বা তদূর্ধ্ব যারা আগে ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হয়নি এমন লোকদের মধ্যে এ টিকার কার্যকারিতা ৩৯ শতাংশ।

অন্যদিকে ৯ বছর বয়সী বা তদূর্ধ্ব বয়সী যারা আগে ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রে এ প্রতিষেধক টিকার কার্যকারিতা ৭৬ শতাংশ। এর পাশাপাশি গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর ওপর এ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় এ টিকা গ্রহণ করলেও কারও ওপর এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না বা কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দু’বছরে দেশে ডেঙ্গুর নতুন সেরোটাইপ-৩ দ্বারা সংক্রমণ ঘটছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে এ টিকা ব্যবহার বিধিসম্মত বা যুক্তিযুক্ত হতে পারে। তারা মনে করেন যেহেতু সরকারিভাবে এটি সর্বস্তরে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তাই এটিকে সহজলভ্য করতে পারলে অপেক্ষাকৃত অবস্থাসম্পন্নরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুযোগ পাবেন। এতে ডেঙ্গুজনিত জটিলতা ও মৃত্যুহার অনেক হ্রাস পাবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে টিকা বাজারে এসেছে সেটি ব্যবহারে আরও অপেক্ষা করতে হবে। এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এমনকি এ বিষয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে নিরাপদ থাকা সম্ভব। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার হাজার ২৪৭ জন রোগী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩০৬ জন ছাড়পত্র পেয়েছে এবং ৯৩৮ জন চিকিৎসাধীন আছে। এ রোগে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি দেশের সামগ্রিক চিত্র নয়। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালের চিত্রমাত্র।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০১২-২০২০ কৌশলপত্রে এর প্রতিষেধক ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে। এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ে সংস্থাটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এটি হল-২০২০ সালের মধ্যে ডেঙ্গুজনিত ভোগান্তি ২৫ শতাংশ কমানো এবং মৃত্যুহার ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা। সংস্থার নীতিমালা অনুসারে এ রোগ প্রতিরোধে স্বল্পপরিসরে বা সর্বস্তরে টিকা ব্যবহারের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here