চরম সংকটে শেয়ারবাজার, পুঁজি হারিয়ে রক্তশূন্য হচ্ছে বাজার

0
484

খবর৭১ঃ চরম সংকটে শেয়ারবাজার। পুঁজি হারিয়ে রক্তশূন্য হচ্ছে বাজার। সোমবার একদিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৮৮ পয়েন্ট কমেছে। ফলে বাজারমূলধন কমেছে ৭ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আস্থা সংকটে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলেছে, দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।

আর এক মাসে সূচক কমেছে ৩৮৪ পয়েন্ট এবং বাজারমূলধন কমেছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে ডিএসইর সূচক। লেনদেন নেমে এসেছে ৩শ’ কোটি টাকার নিচে। অর্থাৎ সবগুলো নির্দেশক বিবেচনায় নাজুক অবস্থায় দেশের শেয়ারবাজার।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, চাহিদা ও সরবরাহ উভয় দিক থেকেই বাজারে সমস্যা রয়েছে। চাহিদার দিক থেকে সমস্যা হল নতুন বিনিয়োগকারী আসছে না। আর সরবরাহের দিক থেকে সমস্যা হল ভালো কোনো কোম্পানি আসছে না।

তার মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর আস্থা অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা কাটবে না।

আলোচ্য সময়ে ডিএসইর মূল্যসূচক ৫ হাজার ৪৭৫ পয়েন্ট থেকে কমে ৫ হাজার ৯১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। হিসাবে মূল্যসূচক ৩৮৪ পয়েন্ট কমেছে। শতকরা হিসাবে যা ৭ শতাংশের বেশি। লেনদেন কমে ৩শ’ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বাজারে তারল্য একেবারে তলানিতেই। একটি খাত দিয়েই শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সহজেই বোঝা যায়।

বাজেট ঘোষণার একদিন আগে ১১ জুন ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৪ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে সোমবার পর্যন্ত তা কমে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ আলোচ্য সময়ে বাজারমূলধন ২৪ হাজার কোটি টাকা কমেছে। আর সোমবার একদিনেই কমেছে ৭ হাজার কোটি টাকা।

একক খাত হিসেবে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে শক্তিশালী হল ব্যাংক। কিন্তু বর্তমানে একটি সিগারেটের দামে ৪টি ব্যাংকের শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে একটি বেনসন সিগারেটের দাম ১৩ টাকা। আর আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৩ টাকার কিছুটা বেশি। ওই হিসাবে ১টা সিগারের দামেই ৪টি ব্যাংকের শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে আরও ৫টি ব্যাংকের শেয়ার। এগুলো হল- এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এছাড়া অভিহিত মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এক্সিম ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার। বাকি ব্যাংকগুলোর দামও অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি।

বাকি খাতগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বাজারের এই দরপতন যৌক্তিক নয়। কারণ স্টেকহোল্ডারদের প্রায় সবগুলো দাবিই পূরণ করা হয়েছে। সরকারও বাজেটে শেয়ারবাজারের প্রণোদনা দিয়েছে।

তিনি বলেন, বড় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসে কয়েকদিন ধরে শেয়ারের ক্রয়ের চেয়ে বিক্রি বেশি। কী কারণে তারা এ কাজ করছে, তা বুঝে আসে না। তবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে লিজিং কোম্পানি নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট আসছে। বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট চলছে।

যে কারণে আমানত সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১০ শতাংশ সুদেও আমানত সংগ্রহ করছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকে চলে আসছে। ফলে বাজারেও তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া রোববার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বাজারের সবচেয়ে বড় কোম্পানি গ্রামীণফোন। ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ৯ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। ফলে প্রত্যাশা অনুসারে লভ্যাংশ না আসায় সোমবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ২০ টাকা কমেছে।

শতকরা হিসাবে যা প্রায় ৬ শতাংশ। এছাড়া কোম্পানিটির আয়ও কিছুটা কমেছে। এতে এক কোম্পানিতেই বাজারের মূল্যসূচক প্রায় ৪০ পয়েন্ট কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে গ্রামীণফোনের বাজারমূলধন ৪৭ হাজার কোটি টাকা। যা ডিএসইর মোট বাজারমূলধনের প্রায় ১৩ শতাংশ। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমলে অন্যান্য কোম্পানিতেও এর প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তারল্য সংকটেই মূলত বাজারের এই অবস্থা। এখান থেকে উত্তরণের জন্য বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে হবে।

সোমবারের বাজার চিত্র : একক দিন হিসেবে সোমবার ডিএসইতে ৩৫২টি কো¤পানির ১০ কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৩০৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৭টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩০৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯১ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ৩৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮১৮ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৬ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here