কাল সারা দেশে ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধের ডাক

0
378

খবর৭১ঃ ৮ দফা দাবিতে অনড় থাকলেও আজকের মতো সড়ক থেকে উঠে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। তবে আগামীকাল বুধবার (২০ মার্চ) সকাল থেকে আবারও রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এছাড়াও কাল থেকে সারা দেশে ক্লাস বর্জন ও সড়ক অবরোধেরও ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানানোর পর সন্ধ্যার দিকে সড়ক অবরোধ শেষে সাংবাদিকদের পরবর্তী কর্মসূচি জানান বিইউপি শিক্ষার্থী প্রতিধিনি মায়েশা নূর।

মায়েশা বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) মতো আন্দোলন স্থগিত করা হলেও আগামীকাল (বুধবার) সকাল ৮টা থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করা হবে। একইসঙ্গে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ এলাকা থেকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আমাদের এই আন্দোলনে গতবছরের মতো কোনও হামলা ও রক্তাক্ত চেহারা দেখতে চাই না। আমরা পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তা চাই। আন্দোলনের সময় আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

মায়েশা নূর আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৮ দফা দাবি দিয়েছি। এটা গণমাধ্যমে চলে এসেছে। আমাদের এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন না। আমাদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক কোনও দল বা ব্যক্তিকে গ্রহণ করবো না। সবাই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেবেন। আমরা আমাদের অভিভাবকদের এই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করছি।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবিগুলো হচ্ছে:
১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।
২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. আজ থেকে ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে।
৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সব স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সাথে জড়িত সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেইটের সামনে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এর পরই সহপাঠী নিহতদের ঘটনায় প্রগতি সরণী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বিইউপি’র শিক্ষার্থীরা।

দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথেস্ট ইউনিভার্সিটিসহ ৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এতে বিমানবন্দর থেকে বিশ্বরোড ও বাড্ডা হয়ে রামপুরা এবং গুলিস্তান রুটের সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে মেয়রের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।

বিকেলে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ডাকসু ভিপি নূর বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নর্থ সাউথ, ইস্ট-ওয়েস্টসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে এরই মধ্যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বানচালের চেষ্টা চলছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

নুর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আমরা সবসময় চাই সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ হোক। সড়কে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। এর আগে সড়কে নৈরাজ্য বন্ধে যেসব দাবি ছিল সেগুলো বাস্তবায়িত হোক।’

উল্লেখ্য, সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীতে গত রবিবার (১৭ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে পঞ্চমবারের মতো ট্রাফিক সপ্তাহ। এরই মধ্যে বাসচাপায় এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মর্মান্তিত মৃত্যু হলো।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here