৮০% পাইপলাইনের পানিতে ক্ষতিকারক জীবাণু

0
369

খবর৭১:বাংলাদেশে বিভিন্ন উপায়ে সরবরাহ করা খাবার পানির ৪১ শতাংশ ডায়রিয়ার জীবাণু বহন করছে। অর্থাৎ সব ধরনের পরিশোধিত পানির ৪১ শতাংশের মধ্যে ক্ষতিকর জীবাণু রয়েছে বলে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

শুধু তা-ই নয়, প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানির ৮০ শতাংশে আছে ক্ষতিকারক জীবাণু। সারা দেশের ১৩ শতাংশ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, একাধিক পরিবার একই টয়লেট ব্যবহার করছে—এমন মানুষের সংখ্যা দেশে পাঁচ কোটি আট লাখের বেশি। পানি ও স্যানিটেশনে দুর্বলতার কারণে অপুষ্টি ও পেটের পীড়ার মতো স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন রোগ ও উপসর্গের প্রকোপ বাড়ছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। দরিদ্র ও শিশুরা এর শিকার হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্যের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম। বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রধান সিরিন জোমা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। তবে এখনো পাঁচ কোটির বেশি মানুষ অংশীদারির ভিত্তিতে টয়লেট ব্যবহার করায় স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েই গেছে। মাত্র ২৮ শতাংশ টয়লেটে সাবান ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রয়েছে। আর শহুরে মানুষদের মাত্র ৭ শতাংশ পাইপলাইনের মাধ্যমে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় যুক্ত আছে। শহর এলাকার বস্তিতে স্বাস্থ্যসম্মত পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় চরম সংকট রয়েছে। বড় শহরগুলোর বস্তিতে উন্নত স্যানিটেশনের সুযোগ পাঁচ গুণ কম। সারা দেশের তুলনায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টির হারও বস্তিতে অনেক কম।

প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, শহর এলাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা আরো উন্নত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, পানিব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বদ্বীপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী ১০০ বছরে পানি ব্যবস্থাপনায় করণীয় পরিকল্পনা রয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহে আরো উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করেন।

সিরিন জোমা বলেন, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত মানে উন্নীত না হওয়ায় অনেক সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে। এর ক্ষতির শিকার বেশি হচ্ছে শিশুরা। শিশু বয়সীদের অপুষ্টির শিকার হওয়ার প্রবণতার সঙ্গে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনে দুর্বলতার সরাসরি সংযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু বয়সের তুলনায় খর্বকায়। বিষয়টি শিশুদের শিক্ষা ধারণ করার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় নিরাপদ পানি সরবরাহে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুমৃত্যু ও অপুষ্টি ঠেকাতে পানি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পানি ও স্যানিটেশনের আলাদা উদ্যোগে শিশুদের কল্যাণ বাড়বে। নাগরিকদের নিরাপদ ও কার্যকর পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করতে সরকারগুলোকে অর্থায়নের বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মাত্র অর্ধেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। নারীদের মাত্র ২৫ শতাংশ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে আলাদা টয়লেট। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত পানির অভাব থাকে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সংক্রান্ত রোগে ধনী জনগোষ্ঠীর তুলনায় দরিদ্ররা তিন গুণ বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য (ওয়াশ) খাতে সরকারি বরাদ্দ কয়েক বছরে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here