৪০ বছর পর সচল হচ্ছে লালমনিরহাট বিমানবন্দর

0
586

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশদের তৈরি করা লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি প্রায় ৪০ বছর পর চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়া বিমানবন্দরটি আশির দশকে চালু করা হলেও অল্প কিছু দিনের মধ্যে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এ বিমানবন্দরটি চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আর্থ-সামজিক ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে বলে আশা করছে উত্তরবঙ্গের মানুষ।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে বৃটিশদের তৈরি এ বিমানবন্দরটি। আশির দশকে সংস্কার করে এই বিমান বন্দরটি চালু করা হলেও পরবর্তীকালে আবার বন্ধ হয়ে পড়ে এটি। সে থেকেই উত্তরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই আবার আকাশ পথে যোগাযোগ স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকার তাদের আবেদনে সাড়াও দিয়েছে। বিমানবন্দরটির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেন, এটি চালু করতে রানওয়ে সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রায় চার মাইল লম্বা রানওয়ে, সুবিশাল টারমাক নিয়ে এ বিমানবন্দরের আয়তন ১ হাজার ১৬৬ একর। লালমনিরহাটে এই বিমান বন্দরটি চালু হলে এটি হবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিমানবন্দর। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদ্স্য নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব দ্রুত যেন এই বিমানবন্দও থেকে বিমান চলাচল শুরু হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ^াস দিয়েছেন।
লালমনিরহাট বিমান বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভুটান সরকার লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ব্যবহারের জন্য পছন্দের তালিকায় রাখলেও আকাশসীমা নিয়ে জটিলতা থাকায় তা বাস্তবায়িত হতে সময় লাগছো। তবে ভারত, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হলেই বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক ভাবে বন্দরটি ব্যবহার করতে পারা যাবে। সব ঠিক থাকলে এ বছরেই লালমনিরহাট বিমান বন্দরটি চালু করা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ছিল দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকারকে তথা তৎকালীন ভারতবর্ষকে রক্ষার একটি প্রধান বিমানক্ষেত্র। এই ঘাঁটি না থাকলে ভারতবর্ষ এবং ইংরেজদের ভারতবর্ষ ছাড়ার ইতিহাস হতো অন্য রকম। লালমনিরহাটকে তখন বলা হতো ‘গেটওয়ে টু নর্থ-ইস্ট’ এবং ‘মাউথ অব আসাম’ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তখনকার বিশাল প্রদেশ বৃহত্তম আসামে প্রবেশের একমাত্র পথ ছিল লালমনিরহাট। তাই সে সময় এ বিমানবন্দরের গুরুত্বও ছিল।
লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন,‘বিমানবন্দরের রানওয়েটি পুনরায় সচল করা হবে এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রথম অবস্থায় এখানে সপ্তাহে দুটি করে বিমান ওঠানামা করবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, লালমনিরহাটের বৃটিশ নির্মিত বিমানবন্দরটি চালু হলে উত্তরের পিছিয়ে থাকা এ জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এটি। সেই সঙ্গে প্রসার ঘটবে ব্যবসা বাণিজ্যের। এছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও আকাশ পথে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর হবে বলে তিনি জানান। স্থানীয়রা আশা করছেন, বিমানবন্দরটি যাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মমিনুল হক বলেন,‘এলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি লালমনিরহাট বিমানবন্দরের ঐতিহ্য ফিরে আসুক এবং বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা হোক। বিমানবন্দরটি চালু হবে এটিই জেলাবাসীর প্রাণের একমাত্র দাবি।’ আর বিমান বন্দরটি চালু করার জন্য বে-সরকারী বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের একটি তদন্ত টিম বেশ কয়েকবার লালমনিরহাট সফর করে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here