৩ সিটিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রাজত্ব কায়েম করেছে

0
220

খবর৭১ঃ তিন সিটিতে শ্বাসরোধকারী গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,‘নৌকা মার্কার অনুকূলে একতরফা ভোট করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন যৌথভাবে বিবেকশুন্য অনাচারে লিপ্ত রয়েছে। সেখানে আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদেরই জয়জয়কার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সাধারণ ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেখানে রাজত্ব কায়েম করেছে’।

রবিবার (২৯ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন,‘গাজীপুর ও খুলনায় নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন কথা দিয়েছিল আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে। কিন্তু তিন সিটি নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হলে কমিশনের পুরনো চেহারা আবারও ফুটে উঠতে শুরু করে। তারা রাখঢাক না করে মুখোশের শেষ সুতোটুকুও খুলে ফেলেছে। যেভাবে খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, যেভাবে নির্বাচনী এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেভাবে ধানের শীষের নির্বাচনী এজেন্টদের এলাকাছাড়া করা হয়েছিল, ঐ দুই সিটি এলাকায় প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর রুপ দেখা যাচ্ছে তিন সিটি এলাকায়’।

তিনি বলেন,‘তিন সিটির আকাশে বাতাসে ভোটারদের মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে ভয় আর গুঞ্জন। গাজীপুর ও খুলনার ভোটের মতো নয়া সিস্টেমের ভোট ডাকাতি প্রত্যক্ষ করবে কি না? এই আতঙ্কে আছে তিন সিটির ভোটাররা। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের মন থেকে ভয়ভীতি দূর করে শঙ্কামুক্ত ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকারের দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোটারশুন্য একতরফা নির্বাচনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের নির্বাচন এখন সরকারি সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলাটাই যেন এখন আওয়ামী লীগের প্রধান এজেন্ডা। আকাশের তারা পৃথিবী থেকে দেখা যায়, কিন্তু গণতন্ত্রকে যাতে দূর থেকেও দেখা না যায় সে ব্যবস্থা করছেন ভোটারবিহীন সরকার প্রধান। গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করেছেন শেখ হাসিনা। সুতরাং বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন এখন স্বপ্নালোকে বিরাজ করছে’।

তিন সিটি নির্বাচনেই অসংখ্য অভিযোগেও মর্মর মনুমেন্টের মতো নিশ্চুপ থেকেছে ইলেকশন কমিশন, প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা করেনি-এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,‘নির্বাচন কমিশনের মনে-মস্তিস্কে অন্ধকার নেমেছে বলেই যুক্তি সেখানে অবান্তর। নিজেদের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ না করে মনে হয় সরকারি হুকুমের ভয়ে অসহায় নীরব-নিশ্চল পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। সেজন্য একের পর এক নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদেরই তল্পী বহন করছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের বাড়িঘর, দোকানপাট, বাজার ভেঙ্গে দেয়া, পুড়িয়ে দেয়া, ঘরছাড়া করা, কর্মীশুন্য-নেতাশুন্য সর্বোপরি ভোটারশুন্য করা কোন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষণ ? ’।

রিজভী বলেন,‘যদিও তিন সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন আলামত এখনও পর্যন্ত নেই, তবুও ভোটারদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবে ধানের শীষের প্রার্থী। শাসকদল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নির্বাচন নিয়ে যে অবিমৃশ্যকারিতা করছে তার জবাব তো নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে। তবে আগামীকালের তিন সিটি নির্বাচন দেখার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে খাতে প্রবাহিত হবে, সেটিকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকবে না। জনগণ আর হাত গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকবে না। সাইরেন বাজতে থাকবে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত। মানুষের ক্ষোভের উত্তাল প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনকেও জবাবদিহি করতেই হবে’।

তিনি অভিযোগ করেন,‘সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে গতকাল রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ৪/৫ দিন আগে তার ছেলে রুমান রাজ্জাককেও পুলিশ আটক করে’।

রিজভী বলেন,‘ ঢাকা থেকে কালো গাড়িতে করে সিল মারা অতিরিক্ত ব্যালট পেপার রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধানের শীষের পুরুষ ও মহিলা এজেন্টরা গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সিটি এলাকায় প্রায় ১০টি কালো কাঁচঢাকা গাড়ি ঘোরাফেরা করছে। এই গাড়ির ভেতর কারা সেটা নিয়ে ভোটাররা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠিত। এর ভেতরে কী সাদা পোশাকধারী সরকারি বাহিনীর লোক নাকি বহিরাগত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা, তা নিয়ে স্থানীয় মানুষের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পুরুষ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির মহিলা নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করছে পুলিশ’।

বিএনপির এই নেতা বলেন,‘বরিশাল এখন আওয়ামী ক্যাডারদের দখলে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে বহিরাগত ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গোটা সিটি এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। পুলিশ-র‌্যাব এর ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে’।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হাওলার, এস এম জাহিদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here