৩৭ হাজার একর বনভূমি হুমকিতে

0
330

খবর৭১ঃ কক্সবাজারের মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রয়োজন সাড়ে ৯ হাজার একর ভূমি। মিরসরাই ইকোনমিক জোনের জন্য দরকার ২২ হাজার একর। আবার দরকার রোহিঙ্গাদের আবাস তৈরির জন্যও। তাই উজাড় করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার একর বনভূমি। এভাবেই প্রায় ৩৭ হাজার একর বনভূমি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বিলীন হচ্ছে। আবার বিদ্যুৎ ও রেললাইনের জন্য ৪০ কিলোমিটার জায়গা দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে বনের। এতে বলি হচ্ছে বন। আজ ২১ মার্চ, বিশ্ব বন দিবস। এ দিবস সামনে রেখে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ক্রমাগত বনের জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলে তার প্রভাব পড়বে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন বলেন, ‘দেশের সরকারি অন্য বিভাগগুলোর চেয়ে বন বিভাগের জায়গা বেশি থাকার কারণে সবার নজর থাকে বন বিভাগের দিকে। কিন্তু বন বিভাগ চাইলেও কাউকে কোনো জায়গা বরাদ্দ দিতে পারে না। সরকারই তার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এসব বনভূমি ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের আগামী প্রজন্ম ও দেশের পরিবেশের জন্য কতটুকু বনভূমি প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করেই সামনে এগোনো উচিত।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ও বন গবেষক ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘উন্নয়ন ও রোহিঙ্গাদের কারণে যে পরিমাণ বনভূমি চলে গেছে, তা কখনও ফিরিয়ে আনা যাবে না। যার প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। পতিত জমি ও অবক্ষয়প্রাপ্ত বনগুলো পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হলে এ ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’

মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল :মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার প্রায় সাড়ে ৯ হাজার একর ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য। এর মধ্যে সোনাদিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে ট্যুরিজম জোন। দুই মৌজার বনভূমি রয়েছে প্রায় আট হাজার একর। মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমৃদ্ধ প্যারাবন, চর, খাল ও মোহনা নানা প্রজাতির মাছ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল।

মিরসরাই ইকোনমিক জোন :৩০ হাজার একর ভূমিতে হচ্ছে মিরসরাই ইকোনমিক জোন। এর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার একর বনভূমি হচ্ছে উপকূলীয় বন বিভাগের। সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও ফেনীর উপকূলীয় এলাকার এসব ভূমিতে তৈরি করা হচ্ছে এই ইকোনমিক জোন। এ জন্য কাটা হয়েছে অনেক গাছ।

রোহিঙ্গাদের হাতে বন উজাড় :রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল এবং রান্নার কাজের জন্য নির্বিচারে বন ধ্বংস হচ্ছে। বন বিভাগের দেওয়া হিসাবমতে, রোহিঙ্গাদের কারণে টেকনাফ ও উখিয়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে।

তেলের ডিপোর জন্য বিলীন হবে বন :ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ডিপোতে আমদানি করা জ্বালানি তেল পরিশোধনের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে সরবরাহ করা হবে। এ জন্য ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। প্রায় ১৯২ একর সংরক্ষিত বনভূমি সাফ করেই নির্মাণ করা হচ্ছে তেলের ডিপোটি।

বিদ্যুৎ লাইনে বলি হচ্ছে ১৩ কিলোমিটার বন :বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য দীর্ঘ প্রায় ১৩ কিলোমিটার বন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট-মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৬৩ হেক্টর বনভূমির ওপর দিয়ে যাবে এ বিদ্যুৎ লাইন।

রেললাইনের জন্য ২৭ কিলোমিটার :দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাচ্ছে রেললাইন। ১৬ হাজার কোটি টাকার এই রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নেও ব্যবহার হবে বনভূমি। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের তিন সংরক্ষিত বনাঞ্চল- চুনতি অভয়ারণ্য, ফাইস্যাখালী অভয়ারণ্য ও মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কসহ মোট ২৭ কিলোমিটার বনভূমি দ্বিখণ্ডিত করে তৈরি হবে এ রেললাইন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here