৩১ বছরের মধ্যে ছুটি না নেয়া সেই শিক্ষককে সংবর্ধনা

0
278

খবর৭১ঃযশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩১ বছরের মধ্যে ছুটি না নেয়া শিক্ষককে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের দেয়া অনুদানের চেক বিতরণ করা হয় অনুষ্ঠানে।

সোমবার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তপন কুমার বসুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক জাতীয় সংদস্য এমএম আমিন উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম মাহমুদুর রহমান, যশোরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেএম আবু নওশাদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেবাশীষ কুমার বিশ্বাস।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, সংবর্ধিত শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস, কাউন্সিলর জাকির হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর আবদুর রউফ মোল্যা, সমাজসেবক মশিয়ার রহমান মশি প্রমুখ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় বলেন, ৩১ বছর ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস কোনোদিন ছুটি কাটাননি। যে সংবাদটি কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইফায়েস ওসমানের নজরে পড়লে তিনি বিষয়টি আমাকে জানান। মন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক বিষয়টি অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়। আজ তারই উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।

অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির কাছে মন্ত্রী প্রদত্ত বিদ্যালয় তহবিলে ১ লাখ টাকার চেক এবং সংবর্ধিত শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাসের হাতে ১ লাখ টাকার চেকসহ মন্ত্রীর দেয়া প্রশংসাপত্র তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, শিক্ষক সত্যজিৎ মণ্ডল ৩১ বছর চাকরিজীবনে একদিনও ছুটি নেননি। কর্মস্থলে আসতে দেরিও করেননি কখনো। বাবার মৃত্যু, নিজের বিয়ে এমনকি প্রচণ্ড অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠে এসেও স্কুল করেছেন।

কর্তব্যপরায়ণতার এমন উদাহরণ তৈরি করেছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সত্যজিৎ মণ্ডল। দায়িত্বপালনের ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করে, এখন পর্যন্ত কোনও স্বীকৃত পাননি তিনি। তাতে কী? সত্যজিৎ মণ্ডল পরিচিতি পেয়েছেন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামে বেড়ে উঠেছেন সত্যজিৎ মণ্ডল। ১৯৮৬ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চাকরিজীবনের প্রথম দিন থেকেই স্কুল শুরুর আগেই তিনি পৌঁছে যেতেন। দীর্ঘ ৩১ বছরের চাকরিজীবনে তার এ সুঅভ্যাসের ব্যত্যয় ঘটেনি।

শুধু তাই নয়, প্রায় ৩ যুগের চাকরিজীবনে একদিনও স্কুল কামাই করেননি, নেননি ছুটিও। এমনকি নিজের বিয়ের দিন, বাবার মত্যুর দিনেও স্কুলে উপস্থিত থেকেছেন তিনি। এ জন্য নিজের পরিবারের লোকজনসহ অনেকেই তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবুও অটল থেকেছেন সত্যজিৎ। বিবেকের শতভাগ প্রদীপ জ্বেলে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো জ্বেলে চলেছেন তিনি।

সংসার জীবনেও একজন সুখী ও আদর্শ মানুষ গণিতের শিক্ষক দুই সন্তানের জনক সত্যজিৎ মণ্ডল। তার প্রত্যাশা এই স্কুলটিকে তিনি অভয়নগর উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তার জন্য সবার সহযোগিতা চান তিনি। কাজের প্রতি এমন বিরল নিষ্ঠার কারণে পরিবার, সহকর্মী আর শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই শিক্ষক।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here