৩০ ডিসেম্বর দেখিয়ে দিন স্বাধীন দেশের মানুষ কেউ প্রজা না: ড. কামাল

0
226

খবর৭১ঃ ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা-গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের উদ্দেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘এভাবে যারা হামলা করে তারা তো কাপুরুষ, সাহস থাকে তো সামনে আসেন। আমাদের বন্দুকের ভয় দেখাও? চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- আসো সামনা-সামনি। কয় লাখ লোক মারবে? সব মানুষ মারতে পারবা না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের ভয়-ভীতি দেখাতে চায়, তারা আহাম্মক। তারা শহীদদের অপমান করছে। তারা ইয়াহিয়ার উত্তরসূরী।’

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পেশাজীবীদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

দেশের মানুষকে যাতে কেউ আর প্রজা বলতে না পারে সেই জন্য ৩০ তারিখের নির্বাচনে দেখিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেশ মানুষের মালিকানায়। কোনো রাজার মালিকানায় না। আর মাত্র ৫ দিন আছে। আপনারা ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিন- আমাদের যেন কেউ আর প্রজা বলতে না পারে। আমরা প্রজা না। আমরা নাগরিক। স্বাধীন দেশের মানুষ কেউ প্রজা হতে পারেনা। তারা নাগরিক। নাগরিকের দায়িত্ব আছে, কর্তব্যও আছে।’

সেনাবাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরী উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব তাদের। কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা করতে আসে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। যারা মনে করে আমরা ভয় পেয়েছি তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।’

পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, ‘আপনারা দুই নম্বরি কাজ করবেন না। কারও অবৈধ নির্দেশ মানা অন্যায়। সুষ্ঠুভাবে ভোটদানে আপনারা সহযোগিতা করুন।’

জনগনের উদ্দেশ্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর ফজর নামাজ থেকে আপনারা প্রতিটি কেন্দ্রে আসবেন। নিজেরা ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রগুলো পাহারা দেবেন। আমরা চাই কোনো অনির্বাচিত সরকার নয়, নির্বাচিত বৈধ সরকার দেশ শাসন করুক।’

স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আগামী ৩০ তারিখ ভোট দিয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে।

পুলিশের আইজির উদ্দেশে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল বলেন, ‘বে-আইনি অর্ডার মেনে নেওয়া অপরাধ। যারা বেআইনি অর্ডার দিয়েছে তারা অপরাধী। তার দেশ ও স্বাধীনতার শত্রু, সংবিধানের শত্রু।

ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ভোট দিতে জনগণকে যারা বাধা দেবে তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। ওরা বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় ৪ নেতার শত্রু। কারণ বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা ভোট দেওয়ার আমানত রেখে গেছেন। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। তারা ভোট দিতে বাধা দেবে, তা বিজয়ের মাসে মেনে নেয়া যায় না।’

অনুষ্ঠানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘যেখানে জিয়াউর রহমান ও কাদের সিদ্দিকী, সেখানে স্বাধীনতা আছে। কামাল, রব, মান্না যেখানে আছেন, এর চেয়ে স্বাধীনতা আর কোথায় আছে? দেশের মানুষ ভোট যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত’।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটি দল কতটা দেউলিয়া হলে সিনেমার নায়িকার ওপর ভরসা করতে হয়। আমরা সিনেমার হিরোইনদের দেখি টাকা দিয়ে, তাদের দেখে ভোট দেবো না।’

গণস্বাস্থ্য কেন্ত্রের প্রতিষ্টাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি তৈরি হোন, আপনার আমলনামা তৈরি হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর জনগণের সামনে খোদা সেই আমলনামা উন্মুক্ত করে দেবেন। আমলনামার দিনই হবে চূড়ান্ত খেলা, যে খেলায় চোরদের পরাজয় হবে।’

নির্বাচনের দিন ভোটে বাধা দেয়ার জন্য বাহিনীগুলোকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিচ্ছে সরকার এমন অভিযোগ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী নেমেছে। কিন্তু কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারব না সেদিন কেউ ভোটারদের বাধা দেবে না। বরং ভোটে বাধা দেয়ার জন্য বাহিনীগুলোকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিচ্ছে সরকার। তাদের কিনে নেয়ার চেষ্টা করছে’।

তিনি আরও বলেন, মানুষ একটি খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। সরকারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কারো ওপর ভরসা করতে চায়। দেশ আজ এক ঘোর অমানিশার মধ্যে নিপতিত। জনগণ এই সরকারের পতন চায়।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, সদরুল আমিন, এবিএম ওবায়দুল ইমলাম, আখতার হোসেন, চিকিৎসক নেতা একেএম আজিজুল হক, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম আব্দুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here