উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে পাম্প হাউজ ও বর্জ্য পানি অপসারণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় দুই বছরেও চালু হয়নি পৌরসভাবাসীর বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি শোধনাগার।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে নড়াইল শহরের কুরিগ্রাম এলাকায় ৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগারের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সব অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পানির পাম্প নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দুটি পাম্প হাউজ ও বর্জ্য পানি অপসারণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় শোধনাগারটি চালু করা যাচ্ছে না। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান,নড়াইল পৌরসভাবাসীর বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির নিশ্চয়তা দিতে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পানি শোধনাগার। এটির মূল অবকাঠামো দুই বছর আগে শেষ হলেও পাম্প হাউজ ও ড্রেনেজ জটিলতায় এখনো চালু হয়নি। শোধনাগারটি চালু হলে পৌরসভার কয়েক হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা পাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি জটিলতায় পাম্প হাউজ ও ড্রেনেজ নির্মাণ বিলম্ব হয়ে গেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনীহা রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্প চলাকালে চার বছরে ১৪ বার নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবর্তন হওয়ায় কাজের ধারাবাহিকতা থাকেনি।
পাম্প হাউজ নির্মাণে জটিলতার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, শোধনাগারটি চালু করতে চারটি পাম্প হাউজের প্রয়োজন। ২০১৪ সালে স্থানীয় দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চারটি পাম্প হাউজ নির্মাণের কাজ দেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় দুটি প্রতিষ্ঠানই একটি করে পাম্প হাউজ নির্মাণে ব্যর্থ হয়। পরে চুক্তি বাতিল করে নতুন করে দুটি পাম্প হাউজ নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। আর ড্রেনেজ নির্মাণের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন মেলেনি। পাম্প হাউজ নির্মাণ করতে ব্যর্থতার দায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের ওপর চাপিয়েছেন তত্কালীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শরীফ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শরীফ মহাম্মদ হোসেন। তিনি আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, জায়গা নির্ধারণের আগেই টেন্ডার করা ঠিক হয়নি। কর্তৃপক্ষ সময়মতো জায়গা দিতে পারেনি। যখন দিয়েছে তখন মালপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তিন বছর আগে একটি পাম্প হাউজ নির্মাণ করলেও এখনো তাদের সম্পূর্ণ বিল দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে নড়াইল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নড়াইলের একটি মহলের অসহযোগিতার কারণে জমি পেতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে পাম্প হাউজ নির্মাণে এত বিলম্ব। এখন অবশ্য সে জটিলতা কেটে গেছে। এদিকে প্রকল্পটি চলা অবস্থায় গত চার বছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবর্তন হয়েছে ১৪ বার। এর মধ্যে অনেক নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়মিত অফিস করেননি। ফলে অফিসের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ দীর্ঘদিন আটকে থেকেছে। পানি শোধনাগারটি এতদিনেও চালু না হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল গাফফার মোল্লা আশ্বাস দিয়ে,আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, বাকি দুটি পাম্প হাউজ দ্রুত নির্মাণ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চালু হবে বলে আশা করছেন তিনি। এলাকায় খাওয়ার পানির সংকটের বিষয়ে পৌরবাসী জানায়, নড়াইলের পানিতে অতিরিক্ত আয়রন। নড়াইল সদর হাসপাতালের আরএমও মশিউর রহমান বাব,আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আয়রনযুক্ত পানি পান করলে ডায়রিয়া, আমশয়সহ পেটের নানা পীড়া হয়। এ পানিতে কাপড়ও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। পানি শোধনাগারটি চালুর বিষয়ে নড়াইল পৌরসভার বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, পাম্প হাউজ ও ড্রেন নির্মাণের জন্য পৌরসভার কোনো জায়গা না থাকায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে তিনি এটি সমাধান করেছেন। পানি শোধনাগারটি চালু হলে প্রথম অবস্থায় ২ হাজার ৯৪৩ জন গ্রাহক সুবিধা ভোগ করবেন। পরে চাহিদা বাড়লে গ্রাহকও বাড়বে। এদিকে আগামী ২০ বছরের মধ্যে আমরা আমাদের পৌরসভাকে তথ্য প্রযুক্তির আলোকে ডিজিটালাইজড, নান্দনিক, পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন, সমৃদ্ধ শহর হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে থাকবে না যানজট, পরিবেশ দূষণ, মাদক, নারী নির্যাতন, নিরক্ষরতা এবং দরিদ্রতা। তৃণমূল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের কর্মসংস্থান, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বস্তি উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগোপযোগী করণ, বহুতল সুপার মার্কেট নির্মাণ সহ নাগরিক জীবনকে সহজ ও সাবলীল করার স্বার্থে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন। এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পয়ঃনিস্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। নির্মল পরিবেশে আমাদের আগামী প্রজন্মকে শারীরিক, মানষিক, নৈতিক ও মেধা বিকাশের মাধ্যমে একজন সৃষ্টিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার সু-ব্যবস্থা, বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়নে শিশুপার্ক নির্মাণ, খেলাধুলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, সুস্থ্য সাংস্কৃতিক চর্চাসহ সকল প্রকার পৌরসেবা পৌরবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার নিমিত্তে ওয়ার্ড ভিত্তিক কাউন্সিলর অফিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৌরসভাকে বাংলাদেশের মডেল পৌরসভা হিসেবে দেখতে চাই।
খবর৭১/ইঃ