১৩ জন ছাত্রলীগ হামলাকারী চিহ্নিতঃ নূর

0
386

খবর ৭১ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (এসএম হল) শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে মারধর ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে গত বুধবার (৩ এপ্রিল) চার সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন।

এসএম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদকে প্রধান করে গঠিত এ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হলের আবাসিক শিক্ষক আবু বিন হাসান সুসান, জাহিদ উল আরেফিন চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান।

ওইদিন এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার জানিয়েছিলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আজ (৯ এপ্রিল) তিনি বলেছেন, “তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাজ করছেন। গতকাল তারা ডাকসুর ভিপি নুরসহ তার সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। এদের সবার সাক্ষাতকার নিয়ে পরে আবার উনাদের ডাকবেন। বোধ হয় ক্রস-চেক করবেন।”

সেক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি জানিনা তো। আমি সময় বেঁধে দিয়েছি এবং উনারা (তদন্ত কমিটি) কাজ করছেন। এখন উনারা এই সময়ের ভেতর দিলে দিবেন, না দিলে হয়তো আরও সময় চাইতে পারেন। এখনও তো সময়ের ভেতরেই আছে।”

সময়ের ভেতরে আছে বলতে কী বোঝাচ্ছেন? প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, “সাত কার্যদিবস। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে গত বুধবারে। আমি চিঠি ইস্যু করেছি বৃহস্পতিবারে। শুক্রবার ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি মাত্র দুইদিন পার করেছে।”

এর মধ্যে, গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের উপস্থিতিতে তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনেছেন বলে জানিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, “আমাদের ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থলে এই তদন্ত কমিটির প্রধান ও এসএম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। উনারাই তো এই ঘটনার সাক্ষী, উনারা নিজেরাই সব সচক্ষে দেখেছেন।”

নুর আরও বলেন, “তারপরও আমরা হামলার সময়ের যেসব ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করতে পেরেছি, সেগুলো তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। এছাড়াও, অন্তত ১৩ জন ছাত্রলীগের পদধারী হামলাকারীকে চিহ্নিত করেছি। তাদের নাম ও পরিচয়সহ লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছি।”

তদন্ত কমিটির কাছ থেকে কী ধরণের বিচারের আশ্বাস পেয়েছেন, জানতে চাইলে নুর বলেন, “উনারা (তদন্ত কমিটি) বলেছেন যে, তারা এসএম হলের ঘটনার ইনসাইড ফ্যাক্টস তুলে ধরে প্রতিবেদন জমা দেবেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গতকাল সোমবারের মধ্যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো জানিয়ে নুর বলেন, “বিষয়টির আপডেট ও ফলোআপ কী হলো, সে বিষয়ে জানার জন্য আজ দুপুর ১টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে আমরা দেখা করতে যাবো। তারপর আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।”

উল্লেখ্য, এসএম হলে গত ১ এপ্রিল রাতে হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার ও হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ আনেন হল সংসদ নির্বাচনে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ হাসান। তার কপালের ডান পাশ ও ডান কানে মোট ৩২টি সেলাই পড়ে।

এর পরদিন মঙ্গলবার এ ঘটনার বিচার চেয়ে এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ফের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, ডাকসুতে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান ও ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ বেশ কয়েকজন।

সেসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নুর ও আখতারসহ তাদেরকে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এছাড়াও বেনজিরের অভিযোগ, পেটে লাথির আঘাত পেয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অরণির অভিযোগ, পেছন থেকে তাকে লাথি ও ঘুষি মারা হয়। ইমির অভিযোগ, তাকেসহ অন্যদের লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছে। এসময় নিজের গায়েও ডিম লাগে বলে এসএম হলের প্রাধ্যক্ষ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কাছে স্বীকার করেছেন।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে এসএম হলের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে এসে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে রাতভর অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর গত ৩ মার্চ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার পর সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগামী সোমবারের মধ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নয়তো শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

এসএম হলের এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত নয় জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে ডাকসুর নির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী বলেছিলেন, “এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কাম্য নয়। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অবশ্যই আমার সমর্থন থাকবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here