১জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩ জন শিক্ষক!

0
254

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ প্রথম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত এবতেদায়ী শাখার ৫টি শ্রেণী মিলে মাত্র একজন শিক্ষার্থী। যার পাঠদানের জন্য সরকারী বেতনভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোস্তফি ভুড়িধোয়া দাখিল মাদরাসার বাস্তবচিত্র এটি।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অবহেলিত এ গ্রামের কোমলমতি ছেলে মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৯৯০ সালে মোস্তফি ভুড়িধোয়া দাখিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে প্রথম শ্রেনী থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি পেলেও পরে দাখিল পর্যন্ত অনুমোদন দেন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এরপর ২০০০সালের ২৪ এপ্রিল মাসে এবতেদায়ী শাখায় ৩ শিক্ষক ও দাখিল শাখায় ১৪জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। সেই থেকে প্রথম শ্রেনী থেকে দাখিল পর্যন্ত ১০টি শ্রেনীর পাঠদান চলে নিভৃত্য পল্লী গ্রামের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষকরা বেতন ভুক্ত হওয়ার পরে পাঠদানে অবহেলা শুরু করলে শিক্ষার্থীরাও মাদরাসা ছেড়ে যেতে শুরু করে। সরকারী বেতন ভুক্ত কর্মচারী হিসেবে সরকারের খাতায় নাম অন্তভুক্ত হলে তা আর কোন ভাবেই মুছে যায় না। এ ধারনায় শিক্ষকরাও ইচ্ছেমত আসেন স্বাক্ষর করেন আর চলে যান। বেতন ভোগ করলে শ্রম দিতে হয় বা দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেটা তাদের অজানা। এছাড়া ভুলেও সরকারী দফতরের কেউ খোঁজ নেন না সরকারী বেতন ভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির। যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছে। ফলশ্রুতিতে মাদরাসা ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাগজ কলমে ১০টি শ্রেনীতে ২২৮জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে ৪০জন খুজে পাওয়া যায়নি। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেনী পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থী বা শ্রেনী কক্ষ নেই। পুরো ইবতেদায়ী শাখা মিলে ৫ম শ্রেনীতে রয়েছে একমাত্র শিক্ষার্থী নাঈম মিয়া। পড়াশুনার কোন পরিবেশ নেই। পাশের বেে খেলা করছে দুইটি মুরগি। ওই কক্ষে নাঈমকে পাঠদান করছেন জুনিয়ার মৌলভী আক্কাস আলী। তার নিজেরও কোন প্রস্তুতি নেই। সংবাদকর্মীরা মাদরাসায় এসেছেন শুনে ভোঁ দৌড়ে ছুটে এসে একমাত্র শিক্ষার্থী নাঈম মিয়াকে নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন শিক্ষক আক্কাস আলী। পাশেই মুরগিরা খেলা করছে সেটাও ভুলে গেছেন তিনি।
শিক্ষক আক্কাস আলী বলেন, প্রতিদিন ৫/৭ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। তবে অজ্ঞাত কারনে আজ শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত। এবতেদায়ী শাখার অন্যসব শ্রেনী কক্ষ কোথায় এমন প্রশ্নে- পাশের সাইকেল রাখা ফাঁকা একমাত্র কক্ষটিকে দেখান তিনি। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে ৫/৮ জন করে শিক্ষার্থী বসে রয়েছেন শিক্ষকের আগমনের অপেক্ষায়। কোন ক্লাসে শিক্ষক গেলেও প্রস্তুতিহীন। সংবাদকর্মীদের আগমনে পুরো প্রতিষ্ঠান আতংকিত। সকল শিক্ষক কর্মচারীর মাঝে অপরাধ আতংকের ছাপ। শিক্ষক হাজিরা খাতায় ছুটি নেই, স্বাক্ষর দেয়ার ঘরটিও ফাঁকা। তবুও প্রতি মাসে বেতন আসে তাদের। এটা দেখে যে কেউ মনে করবেন প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকে কোন দিন সরকারী দফতরের কেউ পরিদর্শন করেননি।
মাদরাসার অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১০টি শ্রেনীতে মোট শিক্ষার্থী ২২৮ জন। শিক্ষক কর্মচারী মিলে ১৭ জনের বেতন বাবদ প্রতি মাসে সরকারী বরাদ্ধ ২লাখ ৮৫ হাজার ২শ ২২টাকা। গত দাখিল পরীক্ষায় ২৮জন অংশ নিলেও পাস করেছে ৭জন। যার মধ্যে বিগত বছরের দুইজন শিক্ষার্থী। জেডিসি পরীক্ষায় ৩৮শিক্ষার্থীর মধ্যে বিগত বছরের ৩ জনসহ পাস করে মাত্র ১৬জন। মাত্র ৭/৮জন শিক্ষার্থীকে পাস করাতে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকারী খরচ বছরে ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৬শ ৬৪টাকা ও দুইটি উৎসব ভাতা।
মোস্তফি ভুড়িধোয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আবুল বাশার নাঈমী জানান, অজ্ঞাত কারনে প্রথম থেকে ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা ক’দিন ধরে মাদরাসায় আসছে না। তাই পাঠদান হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা না এলে শিক্ষকদের কি করার আছে?।
খবর ৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here