হেয়ার রিমুভ্যালের খুঁটিনাটি

0
648

মসৃণ, জেল্লাদার ত্বকের চিরশত্রু বডি হেয়ার। আজকাল শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার অপশন প্রচুর। কোন পদ্ধতি ত্বকের পক্ষে ভাল? রইল বিশদ আলোচনা।

সাধ করে স্লিভলেস ব্লাউজ় বের করে রেখেছিলেন অফিস পার্টিতে পরে যাবেন বলে। বেরনোর সময় হঠাৎই নজর গেল হাতের দিকে। যা! করব করব করেও, আর করা হয়নি। অগত্যা, স্লিভলেসের মায়া ত্যাগ করে অন্য ব্লাউজ় দিয়েই ম্যানেজ করতে হল। ঠিকই ধরেছেন, হেয়ার রিমুভ্যালের কথাই বলছি। শেষ মুহূর্তে এরকম ক্রাইসিসে আমরা সবাই পড়েছি। এই সমস্যায় যে কতবার স্লিভলেস, শর্টস বা থ্রি কোয়ার্টারকে আলামারিতে বন্দী করে রাখতে হয়েছে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। তবে, আজকাল এটা কোনও সমস্যা নয়। বরং সমস্যা অন্য জায়গায়। এত বেশি অপশন, যে কোনটা ছেড়ে, কোনটা বাছবেন, বুঝে ওঠা দায়। আমরা থাকতে চিন্তা কী! চলুন, হেয়ার রিমুভ্যাল পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিই।

আজকাল বাজারে হেয়ার রিমুভ্যালের হাজারও পদ্ধতি রয়েছে। ওয়্যাক্সিং, থ্রেডিং, হেয়ার রিমুভ্যাল ক্রিম, শেভিং, প্লাকিং এবং লেজ়ার ইত্যাদির প্রত্যেকটিরই কিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে। আবার ত্বকের ধরন বা নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ীও অনেকে আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি এই পদ্ধতিগুলো নিয়ে অনেকের মনেই নানা ভ্রান্তধারণাও রয়েছে। চলুন, পদ্ধতিগুলোর বিষয়ে বিশদে জেনে নেওয়া যাক।

ওয়্যাক্সিং: শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার অন্যতম প্রচলিত পদ্ধতি। মূলত বিভিন্ন পার্লারে এই পদ্ধতিতেই ওয়্যাক্সিং করা হয়ে থাকে। তবে ওয়্যাক্সিংয়েরও কয়েকটি রকমফের আছে। বিভিন্ন পার্লারে এক বিশেষ মিশ্রণের সাহায্যে ওয়াক্সিং করা হয়। প্রয়োজন হলে আপনি বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন এই মিশ্রণ। ২ কাপ চিনি, ১/৪ কাপ জল এবং ১/৪ কাপ লেবুর রস প্যানে দিয়ে দিন। অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন। যতক্ষণ না মিশ্রণ ঘন এবং বাদামি রঙের হচ্ছে, ততক্ষণ ফোটান। এরপর নামিয়ে একটু ঠান্ডা হতে দিন। অল্প মিশ্রণ আঙুলে নিয়ে তাপমাত্রা দেখে নিন। মিশ্রণ গরম থাকবে, কিন্তু ত্বক যেন পুড়ে না যায়। এবার বাটার নাইফের সাহায্যে লোমের গ্রোথের দিকে মিশ্রণটি লাগান। ওপরে ওয়্যাক্সিং ক্লথ বা কোনও পাতলা কাপড়ের টুকরো চেপে রাখুন। এবার লোমের গ্রোথের উল্টো দিকে কাপড়টি টানুন। তবে বাড়িতে এত ঝামেলায় না যেতে চাইলে, রেডিমেড ওয়্যাক্স স্ট্রিপ ব্যবহার করুন। আজকাল বাজারে নানাধরনের ওয়্যাক্সিং স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায়। অনেকেরই ওয়্যাক্সিংয়ের পর ত্বকে লাল র‌্যাশ বেরোয়। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ওয়্যাক্সিংয়ের পর ঠান্ডা জল বা বরফ লাগালে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা মিলিয়ে যাবে। ময়শ্চারাইজ় করতেও ভুলবেন না যেন। এই পদ্ধতিতে লোম একেবারে গোড়া থেকে নির্মূল হয় বলে, এর এফেক্টও দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার হেয়ার গ্রোথের ওপর। এই পদ্ধতি বেদনাদায়ক।

থ্রেডিং: মূলত কোনও অংশের লোম শেপ করতে বা খুব সূক্ষ্ম লোমের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। আমাদের ফেশিয়াল হেয়ার অত্যন্ত সূক্ষ্ম। ফলে ওয়াক্সিংয়ের সাহায্যে তা নির্মূল করা মুশকিল। সেক্ষেত্রে থ্রেডিং খুব ভাল অল্টারনেটিভ। আইব্রো শেপ করা থেকে আপার লিপ অথবা পুরো মুখের হেয়ার রিমুভ্যালের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে সুতোর সাহায্যে লোম গোড়া থেকে টেনে তুলে ফেলা হয় এবং এটিও বেশ বেদনাদায়ক।

হেয়ার রিমুভ্যাল ক্রিম: এই পদ্ধতিও আজকাল অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ, প্রথমত এটি বেদনাদায়ক নয়, এবং দ্বিতীয়ত, এটি বেশ সহজেই যে কোনও সময় ব্যবহারযোগ্য। চটজলদি বা একদম শেষ মুহূর্তে হেয়ার রিমুভ্যালের প্রয়োজন পরলে আপনার পার্লারে ছোটাও সম্ভব নয়। আবার বাড়িতে লেবু-চিনির মিশ্রণ বানিয়ে কিংবা স্ট্রিপের সাহায্যে ওয়্যাক্সিং করাও সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কিন্তু বেশ হ্যান্ডি! তবে হ্যাঁ, ক্রিম ব্যবহারে কার্পণ্য করলে চলবে না। প্রপার হেয়ার রিমুভ্যালের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্রিম ব্যবহার না করলে ফল পাবেন না।

শেভিং: এই পদ্ধতিও বেশ চটজলদি। যদিও অনেকেই এর বিপক্ষে। তবে বেশিরভাগ ধারণাই কিন্তু ভুল। এই পদ্ধতিতে সাবান বা নির্দিষ্ট কোনও শেভিং ফোম ব্যবহার করে রেজ়ারের সাহায্যে হেয়ার শেভ করা হয়। সময়ও কম লাগে, এবং যে কোনও সময় ব্যবহার করতেও পারবেন। তবে, এর প্রধান নেতিবাচক দিক হল, এতে লোম গোড়া থেকে নির্মূল হয় না। ফলে এর এফেক্ট দীর্ঘস্থায়ী নয়। মসৃণ ত্বক পেতে মোটামুটি দু’দিন অন্তর শেভিং করতে পারলে ভাল। খুব ভাল ফল পেতে, শেভিংয়ের আগে, ভালভাবে বডি স্ক্রাব করে নেবেন। এতে ত্বকের ওপরের স্তরের মৃত কোষ দূর হয়। ফলে শেভিংয়ের পর ত্বক অনেক বেশি মসৃণ হয়।

ট্রিমিং: শেভিংয়েরই আর একটি রকম বলতে পারেন। এতে হেয়ার ট্রিম করা হয়। বাজারে আজকাল মহিলাদের ট্রিমার বা এপিলেটরের ছড়াছড়ি। শরীর, মুখ এবং বিকিনি লাইন বা অন্যান্য সেনসিটিভ অঙ্গের জন্য আলাদা রকমের এপিলেটর পাওয়া যায়। এটি বাদ বাকি পদ্ধতিগুলোর তুলনায় সবদিক থেকেই উপকারী। এই পদ্ধতিতে কোনও ক্রিম, ফোম বা স্ট্রিপেরও প্রয়োজন নেই। ব্যথা লাগলেও, তা খুবই সামান্য। তবে শেভিংয়ের মতই এক্ষেত্রেও লোম গোড়া থেকে নির্মূল হয় না বলে, প্রভাব বেশিদিন স্থায়ী হয় না।

প্লাকিং বা টুইজ়িং: খুব অল্প সংখ্যক লোম নির্মূল করতে, এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আগে, অর্থাৎ যে সময় পার্লার এবং স্যালঁর এত রমরমা ছিল না, সেই সময় কি হেয়ার রিমুভ্যাল হত না? তখন না ছিল এত ক্রিম, না এত সব যন্ত্র। ফলে প্লাকিং কিংবা ওয়্যাক্সিংয়ের ওপরই ভরসা করতে হত। এক্ষেত্রে টুইজ়ার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অংশ থেকে আলাদা আলাদাভাবে লোম টেনে তুলে ফেলা হয়। বেদনাদায়ক অবশ্যই, তবে প্রভাবও থাকে বেশিদিন।

ব্লিচিং: এক্ষেত্রে লোম তুলে ফেলা বা শেভ করার কোনও প্রয়োজন নেই। ব্লিচিং এজেন্ট ব্যবহার করে, লোমের রঙ পাল্টে ফেলা হয়। আসলে আমাদের ফেশিয়াল হেয়ার তো খুবই সূক্ষ্ম, তাই সেক্ষেত্রে অন্যান্য হেয়ার রিমুভ্যাল পদ্ধতি অতটাও কার্যকরী হয় না। ব্লিচিং এক্ষেত্রে অনেক সহজ পদ্ধতি। খুব সূক্ষ্ম লোম হওয়ায়, ব্লিচিংয়ের পর তা আলাদা করে বোঝাও যায় না। তবে তঘন ঘন ব্লিচ করা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশে এই পদ্ধতি খুব একটা ফলপ্রদ হবে না। কারণ অন্যান্য অংশের লোম মুখের তুলনায় বেশ বড় এবং গাঢ়। ফলে অন্যান্য হেয়ার রিমুভ্যাল পদ্ধতিই সেক্ষেত্রে ভাল।

লেজ়ার: এই পদ্ধতি নিয়ে অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন জমে আছে। কারণ এই পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায়, সবার পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি লেজ়ার রে নিয়েও সবার মনে এক ভীতি কাজ করে। প্রথমেই বলি, এই পদ্ধতিতে নিরাপদ। তবে লেজ়ারের পরই ত্বকে লালচেভাব কিংবা কিছু দাগ-ছোপ দেখা দিতে পারে। অবশ্য তা সাময়িক। এছাড়া কোনও শারীরিক ক্ষতি বা জটিলতার সম্ভাবনা নেই। তবে এই পদ্ধতি কিন্তু স্থায়ী নয়। অর্থাৎ, কেউ যদি ভেবে থাকেন যে এতে আর কখনই হেয়ার গ্রো করবে না, তা কিন্তু ভুল। প্রকৃতপক্ষে, এই পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি সিটিং নিতে লাগে। পুরো পদ্ধতি শেষ হলে, আপনার হেয়ার গ্রোথ অনেকটাই কমে যাবে, হয়তো তা আর নজরেও আসবে না। তবে এতে ‘পার্মানেন্ট রিডাকশন’ সম্ভব, কিন্তু ‘পার্মানেন্ট রিমুভ্যাল’ সম্ভব নয়। তিন-চারমাস বাদে আপনার হেয়ার আবার দেখা দিতেই পারে। সেক্ষেত্রে আবার লেজ়ার থেরাপি করাতে হবে।

হেয়ার রিমুভ্যাল মিথস

শেভিং করলে লোম আরও পুরু হয়ে ওঠে এবং ত্বকও খসখসে হয়ে যায়- একেবারেই নয়। শেভিং করলে যেহেতু ত্বকের উপরিভাগে থাকা লোমের অংশ কেটে ফেলা হয়, তাই লোম বেড়ে উঠলে ডগা মোটা মনে হয়। আবার আগের মতো বেড়ে উঠলে, লোম আগের মতোই আকার নেয়। এতে ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়ারও কোনও কারণ নেই।

ওয়্যাক্সিং করলে ত্বকে ছোপ দেখা দেয় এবং হেয়ার ইনগ্রোথ দেখা দেয়- ভুল। ওয়্যাক্সিংয়ে সাধারণত লেবুর রস ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করতে অব্যর্থ। লোম একেবারে গোড়া থেকে উঠে আসে বলে, ইনগ্রোথেরও কোনও সম্ভাবনা নেই। (ইনগ্রোন হেয়ার অর্থাৎ যে হেয়ার ত্বকের ভেতরেই বাড়ে, বাইরে আসে না।)

হেয়ার রিমুভ্যাল ক্রিমে ত্বক কালো হয়ে যায়- কিছু কিছু ক্রিমে এমন কিছু ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, যা ত্বকের পক্ষে ভাল নয়। সেক্ষেত্রে ত্বকে জ্বালাভাব দেখা দেয়, ফলে ত্বক কালো দেখাতে পারে। সেক্ষেত্রে উপাদানের দিকে নজর রাখুন। ভাল ব্র্যান্ডের সেনসিটিভ ত্বকের উপযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন।

লেজ়ার হেয়ার রিমুভ্যাল খুব বেদনাদায়ক- না। এতে ত্বকে সাময়িক এক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এর অভিজ্ঞতা, মানুষভেদে ভিন্ন। তবে ব্যথা-বেদনা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here