হৃদরোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ

0
254

খবর ৭১: সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কেবল হৃদরোগ নয়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সারসহ দেশে অসংক্রামক রোগের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বছরে যত মৃত্যু হয় তার ৬০ শতাংশ হয় অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে। বয়স্কদের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তরুণরাও। চিকিৎসকরা বলছেন, বিশ্বে হৃদরোগকে বলা হচ্ছে ‘ফার্স্ট কিলার ডিজিজ’। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন—দেশে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ, আশঙ্কাজনকহারে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি চিকিৎসা সেবা। সেই সঙ্গে অপ্রতুল চিকিৎসক, নার্স, শয্যাসংখ্যা এবং যন্ত্রপাতি।

জাংকফুড, চর্বিযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রমের অভাব, ধূমপান ও অ্যালকোহল পান, ভৌগোলিক অবস্থান এবং সর্বোপরি মানুষের জীবনযাপনের পরিবর্তন দেশে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে, দেশে দিন দিন বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্তদের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। বাংলাদেশে শতকরা ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২০১৭ সালের বার্ষিক হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) প্রতিবছরই হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির বহির্বিভাগে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৪ হাজার ৯০৬ জন ভর্তি হয়েছেন। আর ২০১৫ সালে বহির্বিভাগে দুই লাখ ২২ হাজার ১৮৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৩ হাজার ৩৯০ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তার আগের বছর ২০১৪ সালে দুই লাখ ৫৫৩ জন আউটডোরে এবং ৪৯ হাজার ২৮৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার আগের বছর এক লাখ ৭২ হাজার ২৬৯ রোগী আউটডোরে এবং ৪৩ হাজার ৩৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

এদিকে, সম্প্রতি রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির ওয়ার্ড ও কেবিন ছাপিয়ে আরও অনেক রোগীরই স্থান হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে, বারান্দায়, সিঁড়ির মুখে, এমনকি বাথরুমের সামনেও। চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েকবছর ধরেই দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আর সে কারণেই এ রোগের জন্য বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালটিতেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকাতে হৃদরোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার  বলেন, অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস রোগকে ছাড়িয়ে গেছে হৃদরোগ, ক্রমবর্ধমানহারে বাড়ছে এ রোগের প্রকোপ। কিন্তু সে অনুপাতে দেশে হৃদরোগের চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল। একটি ক্যাথল্যাবের জন্য প্রায় আট থেকে ১০ টাকার প্রজেক্ট নিতে হবে। যা কি না বাংলাদেশের মতো একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশে এটা খুব সহজলভ্য নয়।

একইসঙ্গে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গড়ে উঠছে না দক্ষ জনশক্তি, বিশেষ করে শিশুদের হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য শিশু হৃদরোগ বিষয়টাই ডেভলপ করেনি মন্তব্য করে ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, আমাদের সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়টাকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। আমরা কোনো পলিসির কথা শুনছি না, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোও তারা করেনি। কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসকের সংখ্যা এখনও অপ্রতুল, অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক যন্ত্রপাতিও নেই।

সরকারিভাবে শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মাত্র সাতজন, ঢাকার বাইরে একমাত্র কার্ডিয়াক সার্জারি হয় চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেশের সব মেডিকেল কলেজেও দক্ষ কার্ডিওলজিস্টের অভাব রয়েছে-বলেন ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার।

অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের হার্ট ফেইলিওর, রিহাবিলিটেশন অ্যান্ড প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি বিভাগে প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, দেশে কার্ডিওলজিস্টের সংখ্যা অবশ্যই অপ্রতুল। মোট ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ, নারী ও শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা প্রচুর। যে পরিমাণ রোগী প্রতিদিন হাসতালের বর্হিবিভাগে আসে এবং যে কার্ডিলজিস্ট থাকা থাকা দরকার তার কিছুই নেই।

একইসঙ্গে প্রতিটি জেলাতে নেই উপযুক্ত কনসালটেন্ট, উপজেলাতে নেই কার্ডিওলজিস্ট-তাহলেতো অপ্রতুল অবশ্যই বলতে হবে। তবে মোটামুটি হিসেবে ৬০০-এর মতো কার্ডিওলজিস্ট রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে সবাই দক্ষ নন এবং এটা মোট রোগীর তুলনায় একেবারেই হাতে গোণা। আর পুরো দেশে সমান অনুপাতে চিকিৎসক না থাকায় চাপ এসে পড়ে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। তাতে করে চিকিৎসকরা যেমন হিমশিম খায় তেমনি রোগীদেরও পড়তে হয় নানান ভোগান্তিতে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানালেন পুরোদেশে অসংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জনশক্তি না হলে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে না, শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজগুলোতে এই চিকিৎসাসেবা সীমিত রাখা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here