হাসিনার বিদায়ে ‘এক দফা এক দাবি’: বরিশালে ফখরুল

0
337

খবর৭১: খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির প্রশ্নে কোনও ধরনের আপস চলবে না জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখন দাবি একটাই। একদফা এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি। এখন থেকে এই একটাই স্লোগান আমাদের।’

শনিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে বরিশাল হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

এসময় মির্জা ফখরুল উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন- ‘যার থাবার মুখে গোটা দেশ সেই দানবটা কে?’ জনতার হাত নেড়ে সমম্বরে উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকে ‘হাসিনা… হাসিনা…’।

দেশনেত্রীর মুক্তির আগে কারও সঙ্গে কোনও রফা কিংবা আলোচনা নয়, বেগম জিয়া মুক্ত হলে তবেই আলোচনা কিংবা অন্য কিছুর প্রশ্ন আসতে পারে বলেও জানান ফখরুল। জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আসুন, নতুন করে আমরা বরিশাল থেকে যাত্রা শুরু করি, সেই যাত্রা হউক গণতন্ত্রের সৈনিকদের মুক্তির যাত্রা।’

আবারও বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মাতা’ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যিনি আজীবন লড়াই করেছেন সেই নেত্রীর মুক্তির জন্য আপনারা আজ এখানে এসেছেন। গতকাল কারাগারে দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তাকে যখন বললাম কালকে বরিশালে জনসভা করতে যাচ্ছি তিনি তখন বললেন, বরিশালের জনগণকে আমার সালাম জানাবেন। বরিশালের মানুষ সংগ্রামী লড়াকু। তারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছে, দেশনেত্রীর সঙ্গে আছে।’

মির্জা ফখরুল আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন গণতন্ত্রের জন্য দেশনেত্রীর আজ বরিশালে আপনাদের সামনে আসার কথা তখন তিনি কারাগারে আবদ্ধ। যে কারাগারে তাঁকে রাখা হয়েছে সেখানে আর কোনও বন্দি রাখা হয় না। স্যাঁতস্যাঁতে একটি কারাগারে তাঁকে রাখা হয়েছে।’ চিকিৎসার নামে বেগম জিয়াকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে দেশের জনগণ ভোট দেয়নি। সরকার গায়ের জোরে বন্দুকের জোরে জোর করে ক্ষমতায় বসেছে। তারা আজ জনগণের নেত্রীকে সুচিকিৎসা পর্যন্ত দিচ্ছে না। সংগ্রামী বন্ধুগণ, একটা জাতি কখনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না যদি তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকে। আজকে শত নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। বরিশালে পুলিশ নেতাকর্মীদের তাড়া করছে। আজকের জনসভায়ও পুলিশ নেতাকর্মীদের তাড়া করেছে। জনসভা করতে দিতে চায়নি। আমরা যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে না পারি তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো না। আজকে আপনাদের পরীক্ষা দেয়ার সময় এসেছে। পরীক্ষায় আপনাদের জয়ী হতে হবে। অন্যথায় চির জীবনের মতো আবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দয়া করে ধৈর্য ধরেন, শান্তি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকেন। নেত্রী যে নির্দেশ দেবেন তা পালন করতে হবে। দেশে কোনো ন্যায় বিচার নেই। আইনের শাসন নেই। দেশে একটাই শাসন, জুলুমের শাসন, বুলেটের শাসন চলছে। দেশের অর্থনীতিকে ধংস করে দেয়া হয়েছে। দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন কাদের হয়েছে? আপনাদের (জনগণ) হয়েছে? হয়নি। তাই এই সংগ্রাম বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, এই সংগ্রাম ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। প্রকৃত উন্নয়নের পথে দেশকে ফেরানোর জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শৃঙ্খল হাতে নেয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। স্বাধীনতার পতাকাকে উড়ানোর জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য, মানুষকে রক্ষার জন্য আসুন আমরা সবাই আরও একবার ঐক্যবদ্ধ হই।’

শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জনসভায় উপস্থিত হওয়ায় বরিশালের জিয়ার সৈনিকদের অভিনন্দন জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই বরিশাল বিএনপির ঘাটি-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘাটি। দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মাতা, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাতে আজ আমরা এখানে এসেছি। নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখার কারণে আজ সারা দেশের মানুষ ফুসে উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘যে মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে সেই মামলায় বলা হলো তিনি এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। কিন্তু মামলার রায়ে দেখা গেলো ২ কোটি টাকা বেড়ে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। যেখানে একটি টাকাও উত্তোলন করা হয়নি। সেখানে কিভাবে টাকা চুরি হলো?’

খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে যে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেইভাবে বিএনপি সঠিকভাবে সঠিক পথে চলছে।’

জনতার উদ্দেশ্যে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে এই জনসভায় এসেছেন। যখন দেশে স্বৈরাচার নেমে আসে, যখন দেশে দুর্নীতি হয়, তখন জনগণের কাছে যেতে হয়। আমরা আজকে সেই জনগণের সামনে এসে হাজির হয়েছি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তাদের পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু মুক্ত করেই আনবো না, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে আবারও গণতন্ত্র ও বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনপ্রবর্তন করবো।’

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সমাবেশ প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও এই জনসমুদ্র বন্ধ করতে পারেনি সরকার। দুর্নীতি আজ একটি দলের কাছে সীমাবদ্ধ। যে দলটি একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। এ সরকারের সময় দুর্নীতি কমবে না। বেগম খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের নেতা নয়, এখন তিনি বিশ্ব নেতা। তার নেতৃত্বেই হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে।’

বিএনপিরযুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর প্রতিক, সেলিমা রহমান, এরয়ার ভাইস মার্শাল অব. আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল হোসেন খান, হাফিজ ইব্রাহিম, ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, ঝালকাঠী জেলা সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর, বরগুনা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ।

এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু , বিএনপি নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, হায়দার আলী লেলিন, দুলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসাইন আল মামুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান,বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন,বরিশাল জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ আকন বিপ্লব, বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসেন মামুন, ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাছরিন, সমাজ সভা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম, ছাত্রদল নেতা ইকবাল হোসেন আসিফসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
খবর৭১/এস;

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here