হাকালুকি হাওরে ‘সুস্বাদু ইলিশ’

0
510
হাকালুকি হাওরে ‘সুস্বাদু ইলিশ’
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ‘ইলিশ’ এখন হাকালুকি হাওরে। স্থানীয় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে এসেছে বাঙালির অতিপ্রিয় ইলিশ। আকারভেদে প্রতি মাছের দাম ৭শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। টাটকা এবং দাম কিছুটা সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় নানা শ্রেণীর মানুষরা আনন্দের সঙ্গে এ মাছটি কিনছেন। হাকালুকি হাওরে ইলিশ পাওয়ার ব্যাপারটি অনেকটাই চাঞ্চল্যকর।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, সিলেটে ফেঞ্চুগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওর। প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর আয়তনের এ হাওরটি দেশের বৃহত্তম হাওর। সম্প্রতি জেলেদের জালে ধরে পড়েছে ইলিশ। অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামার কারণে পরিপূর্ণ হাওরে স্থানীয় জেলেদের জালে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের সঙ্গে উঠে আসে ইলিশ।

২০১৬ সালেও এ হাওরে ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল বলে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়।

এর আগে বাঙালির এ সুস্বাদু মাছটি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা করে এ বিশেষ মাছটির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য একটি কার্যক্রম তৈরি করা হয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘ইলিশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম’ এর সার্বিক সুফল বলছেন ইলিশ গবেষকরা।

হাকালুকি হাওরে ‘সুস্বাদু ইলিশ’
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মৎস্য’ বিভাগের ডিন ড. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আপনি খেয়াল করে দেখবেন, হাওরের সঙ্গে নদীগুলো একটি যোগসূত্র রয়েছে। এ কারণেই ইলিশ মাছগুলো দলছুট হয়ে গতিপথ পরিবর্তন করে ‘অ্যাক্সিডেন্টালি’ (দুর্ঘটনাবশত) হাওরে চলে আসতে পারে। এটি প্রকৃতিগত ব্যাপারের একটি ব্যতিক্রম। তবে ‘ইলিশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম’ এর ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই এ মাছটির প্রাচুর্যতা ফিরে এসেছে এটিও কিন্তু ঠিক।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুর এর প্রাক্তন মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বিভাগের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ড. মাসুদ হোসেন খান এ ব্যাপারে বলেন, হাওরে ইলিশের সন্ধান বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। খুবই ভালো লক্ষণ। কেননা, এটি আমাদের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক দীর্ঘ গবেষণারই একটি সুফল। এ গবেষণার মাধ্যমে মা ইলিশ রক্ষা এবং জাটকা নিধন বন্ধে আমাদের কঠোর অবস্থানের কারণেই আজ আমরা এর সুফল ভোগ করছি। আগামীতেও বাঙালি এ প্রিয় মাছটির প্রজনন রক্ষা করতে পারলে আরও ব্যাপকভাবে ইলিশ পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুনঃ জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ; অর্ধেকে নেমে এসেছে দাম

এ মৎস্যবিজ্ঞানীঁ আরও বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় চারটি বিশেষ এলাকা যথাক্রমে- ঢালচর, মৌলভীচর, কালীরচর ও মনপুরায় মা ইলিশ মাছগুলো ডিম ছাড়তে আসে। আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ মাছ ধরার ওপর সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ অক্টোবরে ডিম দেওয়ার সময় মা ইলিশগুলোগুলোকে আমরা আইনের যথাযথ প্রযোগ ঘটিয়ে রক্ষা করেছিলাম। প্রায় ২২ দিন ওইসব এলাকায় মা ইলিশ শিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এর ফলে মা ইলিশ ডিম দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কেউ মা ইলিশ মারতে পারেনি।

ড. মাসুদ হোসেন খান বলেন, তারপর বাচ্চাগুলো আবার আস্তে আস্তে নদীর উপরের দিকে চলে আসে এবং তারা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আমরা আবার এ বাচ্চা ইলিশ অর্থাৎ জাটকা মাছ রক্ষায় প্রতি বছরে মার্চ-এপ্রিল এ দু’মাস কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগের ফলেই জাটকা মাছগুলো রক্ষা পেয়েছে। প্রথমে ডিমওয়ালা ইলিশ মাছগুলো রক্ষা এবং পরবর্তীতের ইলিশের পোনা মাছ অর্থাৎ জাটকা মাছগুলোকে রক্ষা জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের ফলেই ইলিশের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

আমরা ইলিশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা করে মা ইলিশ এবং পোনা ইলিশ রক্ষায় রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও আইনের সহাযতায় তার বাস্তবায়নের ফলেই হাওরে ফিরে এসেছে ইলিশ বলে জানান মৎস্যবিজ্ঞানীঁ ড. মাসুদ হোসেন খান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here