হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল লকডাউন সর্বত্র এখন করোনার আতঙ্ক

0
498
হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল লকডাউন সর্বত্র এখন করোনার আতঙ্ক

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোববার (২৬ এপ্রিল) রাতে ৩ দিনের জন্য তা লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এ সময় পর্যন্ত সাধারণ সেবা কার্যক্রম অন্যত্র স্থানান্তরিত করার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ৭ দিনের লকডাউন চেয়েছিল। কিন্তু আপাতত ৩ দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আরও বাড়তে পারে। সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সদর আধুনিক হাসপাতালে একাধিক ডাক্তার, নার্স, ল্যাব টেকনোলজিস্ট করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। এখনও সাধারণ রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য বিকল্প সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে শীঘ্রই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, সাধারণ রোগীদের সেবাতো হাসপাতালের ডাক্তাররাই দেবেন। তাদের পরিক্ষার রিপোর্ট আসার পর বিকল্প স্থানে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতাল জীবাণুমুক্তকরণ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কারণে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত সময়ে করোনা ট্রায়াজ কর্ণার ও আইসোলেশন ইউনিটের সেবা চালু থাকবে। জনস্বার্থ বিবেচনায় জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষ। গত ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডউন ঘোষণা করা হলেও এ জেলা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে লোকজন। তেমনি হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা যারা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় কর্মরত ছিলেন তারাও করোনার আতঙ্কে ফিরেছেন বাড়িতে। আর তাতেই গোটা হবিগঞ্জ এখন করোনা আতঙ্ক। গত ১৪ দিনে ৪৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সিএনজি চালকসহ এক শিশু মারা গেছেন এ জেলায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ওইদিন যে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জেরই দুইজন। হবিগঞ্জে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১১ এপ্রিল। তিনি পেশায় ট্রাক চালক এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। এই চৌদ্দ দিনে এ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ জন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ফেরত। জেলার নয়টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস, তবে নবীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় এখনো করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্তের খবর পাওয় যায়নি। জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মুখলিছুর রহমান উজ্জল এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২৫ এপ্রিল। এইদিন ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, নার্সসহ ২১ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। আক্রান্তদের মধ্যে ছিলেন জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সদর হাসপাতালের চিকিৎসক একজন, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন ষ্টেনোগ্রাফার, নার্স দুইজন, চালক দুইজন, প্যাথোলজি বিভাগের দুইজন, ব্রাদার দুইজন এবং দুইজন আয়া ও ঝাঁড়ুদার। এর আগে ২০ এপ্রিল আক্রান্ত এক চিকিৎসক ও এক নার্সসহ ১০ জন, ২১ এপ্রিল একজন নার্সসহ দুইজন, ২২ এপ্রিল পাঁচজন, ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যকর্মীসহ তিনজন, ২৪ এপ্রিল চিকিৎসকসহ পাঁচজন। সব মিলিয়ে হবিগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ জন।এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরত ব্যক্তিদের নিয়ে হবিগঞ্জের মানুষ উদ্বিগ্ন, যা বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, লকডাউন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ থেকে কীভাবে অন্য জেলায় লোকজন ছড়িয়ে পড়ছে। সচেতন মহলের অভিযোগ- এ জেলাতে প্রতি ঘণ্টায় ১ জন করোনা রোগী বাড়ছে। অথচ জেলাকে এখনো ‘লকডাউন’ করা হয়নি।যদিও বেশ আগে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলাটিকে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ‘বিচ্ছিন্ন’ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু এরপরও জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ হাটবাজারে মানুষজন সামাজিক দূরত্ব না মেনেই ভিড় করছেন। অযথা মানুষজন বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা গার্মেমেন্ট ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ বিষয়টি মূলত হবিগঞ্জে করোনা ভাইরাস ছড়াতে বেশি ভূমিকা রাখছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগে কর্মরত তিনজনের মধ্যে দুইজন আক্রান্ত হওয়ায় করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ করবেন এখন থেকে মাত্র একজনে। যে কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটিতে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here