হঠাৎ ফেসবুক গ্রুপ ও এডমিন নিস্ক্রিয় হচ্ছে কেন, সমাধান কী

0
353

খবর৭১ঃবাংলাদেশের অসংখ্য জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ এবং গ্রুপের এডমিনদের ফেসবুক একাউন্ট সোমবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। ফেসবুক বলছে, তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘনের অপরাধে এসব গ্রুপ ও এডমিনদের ফেসবুক একাউন্ট ডিজেবল করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের শীর্ষ ফেসবুক গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে এভারগ্রীন বাংলাদশ, বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারস, আপওয়ার্ক বাংলাদেশ, সার্চ ইংলিশ, আওয়ার এভারগ্রীন বাংলাদেশ, ভাইরাল গ্রুপ বাংলাদেশ, ভয়েস অব রাইটস, প্রবাসী বাংলাদেশ, সোনার বাংলা, সবুজ শাড়ি লাল টিপ, ছেলে ভিএস মেয়ে, আমাদের খুলনা- ওয়ার্ল্ড ইন বাংলাদেশ, উই আর বাংলাদেশ, ক্রিকেটখোরসহ আরও অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ।

ফেসবুকের এসব গ্রুপগুলো বন্ধ হওয়ার বিষয়ে হ্যাকার গ্রুপ ডন্স টিমের বিভাগীয় প্রধান এইচ আর সোহাগ বলেন, ফেসবুক প্রতিনিয়তই তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে। তবে বর্তমানে ফেসবুক আরও কিছু নীতিমালা যোগ করেছে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে।

‘যে কারণে কোনো বড় নামধারী টেরোরিস্টের ছবি গ্রুপে বা একাউন্টে আপলোড করা মাত্রই পার্মানেন্টভাবে নিস্ক্রিয় করে দেয়া হচ্ছে সেসব ফেসবুক গ্রুপ ও একাউন্ট।’ আর নিস্ক্রিয় গ্রুপ ও একাউন্টগুলো পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা একেবারেই নগন্য বলে উল্লেখ করেন সোহাগ।

এটাকে সাময়িক ত্রুটি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খুব শিগগির তা সংশোধন করা হতে পারে। যদিও এই ব্যাপারে ফেসবুক এখনো কিছু জানায়নি। তবে ফেসবুক কমিউনিটির এই নীতিমালাকে অসাধু কিছু চক্র ক্ষতির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। যে কারণে তারা অনেক বড় ও জনপ্রিয় গ্রুপগুলো নিস্ক্রিয় করে দিচ্ছে।

ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন ধরে এখন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অনেক সরকারি, বেসরকারি বা বাণিজ্যিক গ্রুপ। এখন আশঙ্কামুক্ত নয় কোন গ্রুপই। ফেসবুকের কমিউনিটি নীতিমালা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এই আশঙ্কা সব গ্রুপ এডমিনদের জন্যই থাকছে।

তারকাদেরও ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম ডিজেবল

একই রাতে ফেসবুক গ্রুপ ও এডমিন আইডি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের তারকাদের ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম একাউন্টেও হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার চার অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, সঙ্গীতশিল্পী ইমরান, অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া ও পূজা চেরির ফেসবুক আইডি ডিজেবল দেখাচ্ছে।

ফেসবুকে তাদের আইডি পাওয়া যাচ্ছে না। আর মেহের আফরোজ শাওনের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও ইন্সটাগ্রাম হ্যাক করেছে হ্যাকারা।

অপূর্ব বলেন, সোমবার মাঝরাত থেকে আমার আইডিতে ঢুকতে পারছিনা। কারা যেন রিপোর্ট করে ডিজেবল করে দিয়েছে। বিষয়টা খুবই বিব্রতকর। এখন আমি আমার আইডি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে ইমরান বলেন, গতকাল রাত সাড়ে চারটার পর থেকে আইডিতে লগ ইন করতে পারছিনা। যারা এই কাজগুলা করছেন, তাদেরকে সাইবার ক্রাইমের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া উচিত। এদের কারণে মানুষ কতটা বিভ্রান্তিতে পড়ে!

এদিকে অভিনেত্রী, নির্মাতা, গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনের ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করেন হ্যাকাররা। ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করতে না পারলেও ইন্সট্রাগ্রাম হ্যাক করতে সক্ষম হন তারা।

এরপরই মেহের আফরোজ শাওন তার ফেসবুকে একাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে সেই কথা জানিয়েছেন। ‘তড়িঘড়ি করে ফেসবুক বাঁচাতে পারলেও ইন্সটাগ্রাম একাউন্টটা বাঁচাতে পারলাম না’- ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন।

কেন ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হচ্ছে?

এই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। কেন ফেসবুক গ্রুপ ডিজেবল হচ্ছে? জবাবে নিরাপদ সাইবার স্পেসের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাইম রিসার্চ অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের (ক্রাফ) মহাসচিব কাজী মিনহার মহসিন উদ্দিন বলেন, কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসারে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় ইস্যুতে কঠোর হচ্ছে ফেসবুক। গাইডলাইন লঙ্ঘন করার কারণে এসব গ্রুপ চিরস্থায়ী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ফেসবুক নীতিমালা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের অস্ত্রের ছবি, জঙ্গির ছবি, সন্ত্রাসীর ছবি, ধর্মীয় কোনো গোষ্ঠীকে হেয় করে ফেসবুক পোস্ট দিলে তার আইডি ও গ্রুপ বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যাবে।

‘কোনো কোনো পোস্ট দেয়া মাত্রই ফেসবুক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আবার কোনোটা ফেসবুকের কাছে অন্য কেউ রিপোর্ট করলে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

মিনহার বলেন, এতদিন ধরে ফেসবুকের এই নীতিমালা তেমন কার্যকর না হলেও সম্প্রতি স্প্যামাররা বিষয়টি বুঝতে পেরে বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমটির গ্রুপগুলোতে পোস্ট করে অন্য আইডি দিয়ে ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করছে। এই রিপোর্ট করার পর গ্রুপ ও গ্রুপের সকল এডমিনদের একাউন্ট ডিজেবল করে দিচ্ছে।

ফেসবুকে জনপ্রিয় কয়েকটি গ্রুপের এডমিন খালিদ সাইফুল্ল্যাহ জানান, হয়তো মিয়ানমার বা ভারতের কিছু স্প্যামার জনপ্রিয় এই গ্রুপগুলোতে জঙ্গিবাদ ও মাদকসহ অন্যান্য কিছু কনটেন্ট ও ছবি পোস্ট করছেন। ফলে সেটা ফেসবুকের নীতিমালার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। এটাও গ্রুপগুলো উধাও হওয়ার কারণ হতে পারে।

প্রতিকারের উপায় কী?

ডন্স টিমের বিভাগীয় প্রধান ও ক্রাফের আইটি স্পেশালিট এইচ আর সোহাগ বলেন, যাদের গ্রুপ এখনো ঠিক আছে তারা নিজ গ্রুপ বাঁচাতে গ্রুপ আর্কাইভ করে রাখতে পারেন। অথবা পাবলিক কমেন্ট বন্ধ করে দিতে পারেন। এর ফলে গ্রুপে কোনো পোস্ট, মন্তব্য ও রিপোর্ট করার সুযোগ থাকবে না। আর এই অবস্থা চালু রাখতে হবে ফেসবুক নীতিমালার পরবর্তী সংস্করণ না হওয়া পর্যন্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here