স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপড়ার অভাব ও সন্তানদের উপর এর বিরূপ প্রভাব!

0
414

খবর৭১ঃ
আমরা সবাই জানি, চারপাশের পরিবেশ ও পরিবার একটা মানুষের চরিত্র গঠনে কতটুকু ভূমিকা রাখে। প্রতিটা মানুষ তার পরিবার , চারপাশের পরিবেশ যেমন -প্রতিবেশী, স্কুল, চলা-ফেরার সাথীদের কাছ থেকে ভালো-মন্দ দুটোই শিখে।তাই যে যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তার চরিত্রে সে পরিবেশের প্রতিফলন ঘটে। তাই প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবে-ই আসে আপনার সন্তানটি নিরাপদে বেড়ে উঠছে তো?

পরিবেশ ভেদে সন্তানদের আচরণ
(১) যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ থাকে, অনবরত ঝগড়া-ঝাঁটি , চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই থাকে সে পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভীতু, আত্মবিশ্বাসহীন, বাবা-মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা নিয়ে বেড়ে উঠে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার খারাপ সম্পর্ক সন্তানের উপর বাজে প্রভাব ফেলে

তারা ভবিষৎতে বাবা-মায়ের সাথে কেমন আচরণ করবে তা সহজেই অনুমেয় এবং তারা যখন সংসারী হবে তারা কখনই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে সফল করতে পারবে না ।

(২) একটি বাচ্চা ছেলে যদি তার পরিবারে তার মাকে তার বাবার দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে এবং তার মাকে এসব সহ্য করে নিতে দেখে বড় হয় তবে সে এটাকেই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে ধরে নেয় । পরবর্তীতে সে যখন স্বামী হয় সেও তার স্ত্রীর সাথে একই ব্যবহার করে এবং আশা করে তার মা যেভাবে সব সহ্য করেছে তার স্ত্রীও সেভাবে সহ্য করবে । স্ত্রী যখন প্রতিবাদী হয় তখনই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসার বদলে রাগ জন্মে , অথবা সে ভাবতে থাকে তার স্ত্রী বুঝি তাকে ভালোবাসে না ! কারণ সে চায় সবকিছু সহ্য করে স্ত্রী শুধু তাকেই ভালোবাসবে , তার কাছে এটাই নিয়ম !

স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে

আবার সে পরিবারের মেয়েটিও তার মায়ের মতো স্বামীর সমস্ত অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করার মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। তার প্রতিবাদ করার সাহস বা স্বাধীনতা মরে যায়।
আবার উল্টো করে বললে যে পরিবারে বাবা-মা একে অপরকে সম্মান করে সে পরিবারের শিশুটি বড় হয়ে তার সঙ্গীকে সম্মান দেখায়।

(৩) যে পরিবারে গৃহপরিচারিকা নির্যাতিত হয় সে পরিবারের শিশু বড় হয়ে কাজের মানুষকে নির্যাতন করাকে স্বাভাবিক ভাবে।

(৪) যে ছাত্র শিক্ষকের দ্বারা পিটুনি খেয়ে বড় হয় সে পরবর্তীতে যদি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেয় তবে পিটুনি দেয়া শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে।

ছাত্র শিক্ষকের পিটুনি খেয়ে বড় হয়ে শিক্ষক হলে একই কাজ করে

যেমন- মাদ্রাসায় বেতের বাড়ি সহ যেকোনো শাস্তি গ্রহনযোগ্য। তাই বাসায় পড়াতে আসলেও দেখবেন আরবি শিক্ষকরা অল্পতেই ছোট ছোট বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলে ফেলে। মারার জন্য তাদের হাত যেন নিশপিশ করে।

(৫) যে পরিবারে অতি কৃপণতা বা অতি খরুচে স্বভাবের বাবা-মা থাকে সে পরিবারের শিশুও সে অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়।

(৬) অতি রক্ষণশীল পরিবারের শিশুদের মানসিকতায়ও রক্ষণশীলতার বহি:প্রকাশ ঘটে। আবার অতি আধুনিক পরিবারে বড় হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রেও অতি আধুনিকতার প্রকাশ ঘটে।

(৭) কথায় আছে – ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস।অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’!

(৮) গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোর বাচ্চাদের মধ্যে গ্রাম্য স্বভাব, মানসিকতা দেখা যায় । সে বাচ্চা বড় হয়ে যত বড় শহরে পা রাখুক না কেন , যত বড় ডিগ্রীই অর্জন করুক না কেন!

তবে এমনও অনেক উদাহরণ আছে অসুস্থ পারিবারিক পরিবেশে অনেকে বড় হয়েও নিজেকে পরিবার থেকে স্বতন্ত্রভাবে তৈরি করেছে । যেমন- মাকে নির্যাতিত হতে দেখে মায়ের কষ্টের মাঝে সম্পূর্ণ নারীজাতির কষ্ট উপলব্ধি করে সে তার স্ত্রীকে প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে। সে ‘ভুল’কে ‘সঠিক’ হিসেবে গ্রহণ করেনি,’ভুল’কে ভুল হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আবার এমন উদাহরণও অনেক আছে যারা সুস্থ পরিবেশে বড় হয়েও অসুস্থ মানসিকতায় নিজেকে তৈরি করেছে।

পরিবার হচ্ছে ‘কুমোর ‘আর পরিবারের শিশুটি হচ্ছে ‘কাদামাটি’।পরিবার তার চরিত্রকে যে রূপ বা আকৃতি দিবে সে ঠিক সে রূপেই পরিণত হবে।একেই বলে ‘পরওয়ারিশ’!
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here