খবর ৭১ঃ বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের ক্রীড়া পরিচালনা করেন জামায়াতের আমীর ও নাশকতা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আবদুর রহিম।
এ নিয়ে জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠান পরিচালনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এছাড়া মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা ও নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা না করায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন।
এ প্রসঙ্গে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুন জানান, আবদুর রহিম জামায়াতের নেতা কী না সে সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম দুদফা বলা হয়েছে। তৃতীয় দফা না বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান।
তিনি দাবি করেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জু তার সিএ ইকবাল হোসেনের কলার ধরে ও এক নারী সঞ্চালনকারীকে লাঞ্ছিত করেছেন।
ইউএনওর এ দাবিকে অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জু ও অন্যরা। রঞ্জু বলেন, ইউএনও এখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল প্রধান অতিথি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুন সভাপতি ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলীপ কুমার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু, নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন সান্নু, ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এম সুলতান আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ক্রীড়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপজেলা জামায়াতের আমীর ও নাশকতা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গৌর গোপাল গোস্বামীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, প্রশাসনের এহেন ঘটনায় তারা লজ্জা ও কষ্ট পেয়েছেন।
এদিকে অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মাইকে অন্য সব অতিথির নাম ঘোষণা করা হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নাম বলা হয়নি। এতে নেতাকর্মীরা অপমানবোধ করে অনুষ্ঠান বয়কট করেন।
এ নিয়ে বিশৃংখলা দেখা দিলে কিছু সময় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলিপ কুমার চৌধুরী জানান, ভোরে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে তারা দলীয় কর্মসূচি শেষে সকাল ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যান। সেখানে তাদের মঞ্চে ডাকা হয়নি। পতাকা উত্তোলন ও বেলুন ওড়ানোর সময়ও ডাকা হয়নি। এমনকি মাইকে নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নাম বলা হয়নি। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে আসেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতা ও নাশকতা মামলার আসামিকে রাখা অন্যায় হয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের আমীর আবদুর রহিম জানান, তিনি ২০১৬ সাল থেকে রাজনীতি বাদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবে কিছু নাশকতা হয়েছিল। তখন ওই সংক্রান্ত মামলায় তার নাম ছিল। মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিক আজিজ জানান, অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ঘোষণা না করায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে তার সমাধান হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ব্যস্ত থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিএ ও কোন মহিলা সঞ্চালককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা শোনেননি বলে তিনি জানান।
শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, আবদুর রহিম মাস্টার এখন জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তার বিরুদ্ধে থাকা নাশকতার মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।