স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাদের দখলে ছিল লালমনিরহাট

0
801

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ॥ লালমনিরহাট জেলায় ৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে। স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাদের দখলে ছিল লালমনিরহাট (১, ২ ও ৩ সংসদীয় আসন ১৬, ১৭ ও ১৮)। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বইছে নির্বাচনের হওয়া। ফলে বেড়েছে সাধারণ ভোটারদের কদর। দলীয় প্রধানের ছবি ও নিজের ছবি সংবলিত পোষ্টার হাট-বাজারে, জেলা শহর ও উপজেলা সদরসহ দর্শনীয় স্থানে টাঙিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলাজুড়ে নির্বাচনী আমেজ, জনসংযোগে প্রার্থী ও নেতাকর্মী ব্যস্ত সময়ই বলে দিচ্ছে যে, নির্বাচন ঘুনিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে সবক’টি আসনই। স্বাধীনতার পর সব ক’টি আসনে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হয়েছিল। ৭৫ এর পর এই আসন তিনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। বিএনপির পর সব কয়টি আসনে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়। শুধু একবার আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল হোসেন বিজয়ী হয়েছিলেন। ৫ম সংসদীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিনটি আসনে বিজয়ী হয়। ৬ষ্ঠ সংসদীয় নির্বাচনে বিএনপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ৭ম সংসদীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিনটি আসনেই বিজয়ী হয়। ৮ম সংসদীয় নির্বাচনে তিনটি আসনে তিনটি দলেই সমান সমান, একটি আওয়ামীলীগ, একটিতে জাতীয় পার্টি ও একটিতে বিএনপি বিজয়ী হয়। ৯ম সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ একটি ও জাতীয় পার্টি দু’টি আসনে বিজয়ী হয়। ১০ম সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ৩টি আসনে বিজয়ী হয়।
সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়. আসন্ন ৩০ডিসেম্বর ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার দখলে যাবে লালমনিরহাটের সীমান্তঘেঁষা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন তিনটি। এনিয়ে চলছে জেলাজুড়ে নির্বাচনী আমেজ, জনসংযোগ ও নেতাকর্মী ব্যস্ততা। মুলত: এবার লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে লাঙ্গল ও ধানেরশীষ, লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে নৌকা ও ধানেরশীষ, লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে নৌকা ও ধানেরশীষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এবার জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৩টি আসনে হেভিওয়েট ৬ প্রার্থী মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এরা হলেন,
লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসন-১৮ : সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে লালমনিরহাট- (সদর) ৩ আসন গঠিত। সীমান্তঘেঁষা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদর আসনে ২ সাবেক মন্ত্রীর লড়াইয়ে গুরুত্ব যেন একটু বেশিই মনে করছেন ভোটাররা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এবং জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক বে-সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসন-১৭ : কালীগঞ্জ-আদিতমারী দুইটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে লালমনিরহাট-২ আসন গঠিত। এ আসন জেলার ভৌগোলিক ভাবে মধ্যবর্তী উপজেলা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে লড়াই হচ্ছে হেভিওয়েট ২ প্রার্থীর মধ্যে। এতে মহাজোট প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ (নৌকা) প্রতীক এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও বিএনপিতে যোগদানকারী রোকন উদ্দিন বাবুল (ধানেরশীষ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসন-১৬ : পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা দুইটি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে লালমনিরাহাট-১ আসন গঠিত। এ আসনে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারী এবং তিনবিঘা করিডোর পেরিয়ে দহগ্রাম ইউনিয়ন রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-১ আসনে লড়াই হচ্ছে হেভিওয়েট ২ প্রার্থীর মধ্যে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন (নৌকা) ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (সুপ্রীম কোর্ট ইউনিট) এর সহকারী আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার হাসান রাজীব প্রধান (ধানেরশীষ) প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, নানা চরাই উৎরাই পেরিয়ে দশম সংসদ মেয়াদ অতিক্রম করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ সরকার। আ’লীগ সরকারের নানামুখি উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডে বর্তমানেও আওয়ামীলীগের দখলে লালমনিরহাটের সবক’টি আসন। পূর্বের ন্যায় এবারেও লালমনিরহাটের আসন ৩টি ধরে রাখতে চান আ’লীগ।
এ ব্যাপারে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বলেন, ৭৫ এর পর এই আসন তিনটি বিএনপির দখলেছিল। এবারেও জয়লাভের ব্যাপারে আমরা শতভাগ নিশ্চিত। তবে আসন্ন ৩০ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হলে লালমনিরহাটের সীমান্তঘেঁষা জেলার সংসদীয় আসন তিনটি বিএনপির দখলেই থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here