সৈয়দপুরে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলছে জুয়া

0
471
সৈয়দপুরে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলছে জুয়া


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। পুলিশের নজর এড়াতে সংঘবদ্ধ জুয়াড়িরা গ্রামের ফাঁকা মাঠ, বাঁশঝাড়, ঝোপ জঙ্গলসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালনা করছে এসব জুয়া। তাস, মোবাইল, লুডুসহ বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে পরিচালনা হওয়া এসব জুয়ার আসরে গুটি কয়েক ব্যক্তি লাভবান হলেও নিঃস্ব হচ্ছে অধিকাংশ মানুষজন। সেই সাথে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে উঠতি বয়সী যুব সমাজ ও নিম্ন আয়ের মানুষজন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে,নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশও। সচেতন মহলসহ অভিভাবকেরা জুয়া বন্ধে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তবে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জুয়া খেলা বন্ধে তারা তৎপর রয়েছে। যেখানে জুয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে। ওইসব আসর থেকে জুয়াড়িদের ধরে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। জুয়া বন্ধে সকলের সচেতনতা প্রয়োজন বলে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুরের ৫টি ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় এসব আসরে চিহ্নিত জুয়াড়িদের উপস্থিতিতে পরিচালিত হচ্ছে জুয়া। সূত্র জানায়, উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়নগুলোর দূরত্ব বেশী হওয়ায় এবং পুলিশ আসার সম্ভাবনা কম থাকায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ফাঁকা মাঠসহ বাঁশঝাড় ও ঝোপ জঙ্গলে বসছে এ আসর। অভিযোগ রয়েছে ওইসব এলাকার অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এসব আসরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন অংশ নিচ্ছে। বিশেষ করে উঠতি যুব সমাজসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন এসব আসরে নিঃস্ব হচ্ছে।

ইউনিয়নগুলোর জুয়া প্রসঙ্গে ওইসব এলাকার অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জন প্রতিনিধিসহ অনেকেই জুয়ার বিষয়টি জানলেও তারা নিশ্চুপ। ফলে ওইসব জুয়া চলছে অনেকটা ঝামেলা ছাড়াই। ওইসব এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রতিদিন সকাল থেকে চালু হওয়া জুয়ার আসর চলে রাত পর্যন্ত। আর এসব জুয়ায় গুটিকয়েকজন লাভবান হলেও বাকীরা সর্বশান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে। আবার অনেকে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূূলক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। তারা ইউনিয়নগুলোর জুয়া বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে গ্রামাঞ্চলের মতো শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় প্রতিদিনই চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। শহরের কাজীহাট পানি ট্যাংকিসহ আশেপাশের নির্জন স্থানে, বাঁশবাড়ি ক্যাম্পের পিছনে ফাঁকা মাঠে, বানিয়াপাড়া রেল ব্রীজের পাশে, বঙ্গবন্ধু সড়কের পানি ট্যাংকি এলাকা, হাতিখানা কবরস্থানের পাশে, উত্তরা আবাসন এলাকা, ফিদা আলী মিলনায়তনের পাশে, রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পিকআপ স্ট্যান্ড, বাংলা হাইস্কুল মাঠ, মিস্ত্রীপাড়া, গোলাহাট, মুন্সিপাড়া, হাতিখানা ক্যাম্পের পিছনেসহ সৈয়দপুরের বিভিন্ন ক্যাম্পে চলছে জমজমাট জুয়া। সবচেয়ে বেশী জুয়া হচ্ছে কাজীহাট পানি ট্যাংকি ও বাঁশবাড়ী ক্যাম্পের পিছনে। ওইসব আসরে উঠতি যুবসহ সব বয়সী মানুষ অংশ নিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। জুয়ার খবর পেয়ে থানা পুলিশ ওইসব জুয়ার আসতে অভিযান চালালেও জুয়াড়িরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সহজেই।
অভিযোগ রয়েছে, ওইসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জুয়ার বিষয়টি জানলেও ভোটের ভয়ে তারা কিছু বলেন না। তাই জুয়াড়িরা জনপ্রতিনিধিদের ভোট দুর্বলতাকে পুঁজি করে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পরিচালনা করছে জুয়ার আসর।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনের পর দিন জুয়ার দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার পরিবেশ কলুষিত হয়ে উঠেছে। এতে করে তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ এলাকার সচেতন মহল পুলিশী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে সৈয়দপুরে জুয়া চলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খান বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। তাই জুয়া খেলার খবর পেলেই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুয়াড়িদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। এদেরকে তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর বাজারে একটি অফিসে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ দিন করে কারাদন্ড প্রদান করেন। তবে তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে জুয়া বন্ধের জন্য সবাইকে সচেতন হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। এজন্য ওইসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন এ বিষয়ে কাউন্সিলদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here