সৈয়দপুরে পাঁ বাধা অবস্থায় কলেজ শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার

0
494
সৈয়দপুরে বিভিন্ন মামলার আসামি কুখ্যাত মনোয়ার গ্রেফতার

মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুরঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে পাঁ বাধা অবস্থায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের হুগলীপাড়ার একটি লিচু বাগান থেকে ওই কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত যুবকের নাম বিধান চন্দ্র রায় (২৫)। সে ওই ইউনিয়নের বালাপাড়ার (শান্তিপাড়া) কৃষক প্রফুল্ল চন্দ্র ঘটুর ছেলে। মৃত বিধান চন্দ্র সৈয়দপুর সরকারী কলেজের রাস্ট্রবিজ্ঞান (অনার্স) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং একটি পাবলিক প্রতিষ্ঠানের পার্ট টাইম কর্মচারি ছিল । খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানার উপ- পরিদর্শক মো.সবুজ আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাঁ বাধা অবস্থায় গলায় দড়ি লাগানো বিধানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। সেখানে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে থানায় আনা হয় লাশটি। পরে মৃতের কারন উদঘাটনে লাশ ময়না তদন্তের জন্য নীলফামারী মর্গে পাঠায় পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুপুরে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মৃতের পরিবারের দাবি বিধানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পাঁ বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাঁদের ইঙ্গিত প্রেমঘটিত বিষয়ে ওই এলাকার একটি পরিবার ও একটি মহলের দিকে।

এ ঘটনায় মৃতের মা প্রমিলা রানী জানায়, ঘটনার রাত (২৬ মার্চ) ১১টার দিকে বিধান খাওয়া করে নিজের ঘরে ঘুমাতে যায়। কিছুক্ষণ পর তারাও (বাবা মা) ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে বিধানের বাবা প্রফুল্ল্য চন্দ্র ঘটু ঘুম থেকে উঠে দেখে বিধানের ঘরের দরজা খোলা এবং সেখানে গিয়ে দেখা যায় ঘরে বিধান নেই। এরপর বিধানকে খুঁজতে গেলে লোক মুখে তারা জানতে পারে বাদলের লিচু বাগানে বিধানের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। পরে সেখানে গিয়ে লাশ দেখতে পায় তারা।

বিধানের দাদু বোতলাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (অব.) শ্রী প্রফুল্ল্য চন্দ্র রায় বলেন গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বিধান প্রতিদিনের মত তাঁর বাড়িতে আসে। কিছুক্ষন পর সে তাঁর মায়ের সাথে বাড়িতে চলে যায়। এরপর সকালে তিনি জানতে পারেন বিধানের লাশ উদ্ধার করার খবর। তিনিসহ এলাকাবাসি জানান,
বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের হুগলীপাড়ার বাসিন্দা কাঁচামাল ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সরকারের মেয়ে পলি রানী সরকারের (২২) সাথে বিধানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়ের পরিবার তাদের প্রেমকে মেনে নেয়নি। তারপরেও বিধানের প্রতি পলির ভালবাসায় ছেদ করতে না পেরে প্রেমিকা পলির বাবা উত্তম কুমার সরকার প্রায় ৭ মাস আগে এনিয়ে শালিস বৈঠক করে। সেখানে প্রেমের দায়ে বিধানকে বেধড়ক মারপিট করে এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করে। এরপরও পলি রানী বিধানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখলে পলিকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পরও পলি বিধানের সাথে মোবাইলে কথা বলাসহ যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। আর এসব জানতে পেরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোন এক সময় বিধানকে ডেকে প্রেমিকা পলির পরিবারের লোকজন বিধানের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে বলে বিধানের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছে। আর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই পাঁ বাধা অবস্থায় লাশ লিচু বাগানের গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিধানের মামা অনিমেষ চন্দ্র বলেন, এটা যদি আত্মহত্যা হয় তাহলে লাশের পা দড়ি দিয়ে বাধা ছিল কেন। তাঁর অভিযোগ সে আত্মহত্যা করতে পারেনা। প্রেমঘটিত কারণেই বিধান হত্যার শিকার হয়েছে বলে তারা এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
থানার উপ-পরিদর্শক মো. সুজন আলী জানান,
ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। মৃতের দুই পা বাঁধা অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে গাছে ঝুলানো অবস্থায় ছিল বলে জানান তিনি।

এদিকে আজ দুপুরে এ ঘটনায় তথ্য জানতে ওই এলাকার একজনকে (৩৬) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে ব্যাপক তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তির নাম ঠিকানা প্রকাশ করেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খান বলেন, সকালে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন মৃতের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য মৃতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসার পরেই জানা যাবে আসল রহস্য। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। কলেজ ছাত্র বিধানের মৃত নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। সর্বত্র একই আলোচনা প্রেমঘটিত কারনেই বলি হতে হয়েছে ওই ছাত্রকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here