মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
সৈয়দপুরে দেড়শ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তির খবরে সৈয়দপুরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন।
গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) ও চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডংফ্যাংয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি স্বাক্ষরের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সৈয়দপুর জুড়ে আনন্দ বয়ে যায়। সৈয়দপুর অঞ্চলের শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষের দাবি ছিলো সৈয়দপুরে নতুন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের। এই জনদাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তার এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গত বছরের ২৯ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়। যা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও শিল্প উদ্যোক্তারা এটি বিশাল প্রাপ্তি বলে উল্লেখ করেছেন। এতে করে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানসহ দৃশ্যপট পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল বলেন, সৈয়দপুরসহ এ অঞ্চলে স্থাপিত উত্তরা ইপিজেডে শিল্প-কারখানা সম্প্রসারণ এবং বিশেষ ইকোনমিক জোন ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হতে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দরকার হবে। বিদ্যুতের বিশাল এই চাহিদা মেটাতে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হতে যাচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে এ অঞ্চলে আরও শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন শিল্প উদ্যোক্তা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার গ্রামকে শহরে পরিণত করার যে ভিশন তাও বাস্তবায়ন করতে বিদ্যুৎ লাগবে। উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হতে যাচ্ছে। এ কেন্দ্র স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা সৈয়দপুরবাসীর পক্ষ থেকে জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাই।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্প নগরীর শিল্প উদ্যোক্তা ও নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তফা জানান, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের নিশ্চয়তার অভাবে এতদিন এ অঞ্চলে নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছিল না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন হতে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেন। দেশী-বিদেশী শিল্প-কারখানা স্থাপনের বন্ধ্যাত্ব থাকবে না। অবহেলিত উত্তরাঞ্চল সমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চলে পরিণত হবে। তিনি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
সৈয়দপুর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা রুহুল আলম মাস্টার বলেন, উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য্য বিদ্যুৎ। এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাব থাকায় শিল্পোউদ্যোক্তাদের আগমন থমকে ছিলো। বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে ওই সমস্যা আর থাকবে না। কৃষি-শিল্পসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বাড়বে সমানভাবে। আগামীতে সৈয়দপুরসহ এ জনপদের জীবনযাত্রার চিত্র পাল্টে যাবে। তিনি সরকারের এ উদ্যোগকে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, সৈয়দপুরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেড়শ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে ১৮ একর জমির ওপর স্থাপিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে চিনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডংফ্যাংয়ের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)। পিডিবির পক্ষে সচিব মিনা মাসুদুজ্জামান এবং ডংফ্যাংয়ের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার ড. ইয়ানজিয়াং চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৩০২ কোটি এবং পিডিবি ২১৫ কোটি টাকা দেবে। বাকি ব্যয়ভার আন্তর্জাতিক ঋণের মাধ্যমে নেওয়া হবে। ২০২১ সালের জুনে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাবে। তেলভিত্তিক সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ব্যবহার করা হবে জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির গ্যাস টারবাইন। অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, বিভিন্ন কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাশ্রয়ী খরচে বিদ্যুৎ উপাদান করা সম্ভব হবে। ভারতের নুমালিগড় থেকে উত্তরাঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে যে তেল আমদানি করা হবে সেটা সরাসরি পাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা অঞ্চলের তেলের মুখাপেক্ষা থাকতে হবে না। আগামী দেড় বছরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র যখন নির্মাণ হয়ে যাবে ভারত থেকে পাইপলাইনের তেল আসাও তখন শুরু হবে। ফলে জ্বালানি নিয়ে তাদের কোনো সংকটে পড়তে হবে না। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এটি নির্মাণও করা হচ্ছে খুব সাশ্রয়ী খরচে। উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন ও জাতীয় গ্রিডের ভারসাম্যের জন্য এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে।
খবর৭১/ইঃ