সৈয়দপুরে তথ্য অধিকার আইনের সুফল মিলছে না

0
305

খবর ৭১, মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে:
সৈয়দপুরে সরকারি দপ্তরের সেবা খাতের তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষ আইন সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকায় এর সুফল পাচ্ছে না তারা। এ নিয়ে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে প্রচার প্রচারণা না থাকায় সেবা গ্রহিতারা জানেন না এ সম্পর্কে কিছুই। আবার হাতে গোনা দু-একজন তথ্য পেয়ে আবেদন করলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত তথ্য প্রাপ্তি থেকে বি ত হচ্ছেন। আবার তথ্য মিললেও তাতে পরিপূর্ণ তথ্য থাকছে না। সৈয়দপুরের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য অধিকার আইনের এমন হতাশাজনক চিত্র মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার সেবা খাতের ১৭টি সরকারি দপ্তর-অধিদপ্তর রয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে হাসপাতাল, বিদ্যুৎ ও পানি উন্নয়ন দপ্তর এবং রেলওয়েসহ বেশকিছু সরকারি ও স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে অধিকাংশ দপ্তর-অধিদপ্তরে কেউ তথ্য চাইতে আসেনি । উপজেলা পরিষদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে মাত্র ৬ জন তথ্যের জন্য আবেদন করেছেন। তবে তথ্য গ্রহিতার সংখ্যা শুণ্যের কোঠায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তার জানান, তাদের তরফ থেকে কোন অসহযোগিতা নেই। বরং তথ্য গ্রহিতারাই আসেন না দপ্তরে। তাদের মন্তব্য সাধারণের মধ্যে বিষয়টি জানা না থাকায় বেশির ভাগ দপ্তরে কেউ তথ্য জানতে আসেন না। এ নিয়ে সরকারের তথ্য অধিদপ্তর সাধারণের মাঝে উদ্বুদ্ধকরণ প্রচার প্রচারণা চালালে জনসাধারণের মধ্যে তথ্য জানার আগ্রহ তৈরী হত। এটি নিয়মিত করা হলে সরকারের মহতি বহু কর্মকান্ড সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞাত থাকত না। অথচ অজ্ঞতার কারণে মানুষ শতভাগ তথ্য প্রবাহের সরকারি সুফল ভোট করতে পারছে না।
অপরদিকে অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়নি। সাধারণত দপ্তরের প্রধান কর্তা ব্যক্তিরা এ কাজটি করে থাকেন। কিন্তু তাদের প্রশাসনিক ব্যস্ততার জন্য প্রায় ক্ষেত্রে ওই দায়িত্ব পালনে সমর্থ হন না। আবার অনেক কর্মকর্তা আইনের গুরুত্ব সম্পর্কে না জানায় তথ্য দিতে গড়িমসি করেন। তারা উধর্তন কর্মকর্তার দপ্তরে যোগাযোগ করার কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান। ফলে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতায় তথ্য প্রাপ্তির আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তথ্য আগ্রহীরা।
তথ্য গ্রহিতা ভূক্তভোগী রুহুল আলম মাষ্টার জানান, তিনি সরকারি কয়েকটি দপ্তরে তথ্যের জন্য আবেদন করে পরিপূর্ণ তথ্য পাননি। আবার কেউ কেউ তথ্য সরবরাহ করতে অসহযোগিতা করেছেন, কেউ আবার উর্ধ্বতন দপ্তরে যাওয়ার কথা বলে দায়িত্ব শেষ করেছেন। তার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে আইন সম্পর্কে প্রচার না থাকায় ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার বাড়ছে না।
এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন পরিবর্তনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আরিফ আনিস সাধারণ মানুষের তথ্য প্রাপ্তির পরিসংখ্যান হতাশাজনক বর্ণনা করে বলেন, জনসাধারণের মধ্যে সরকারি সেবা এবং মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তথ্য অধিকার আইন জারি করেছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের তথ্য প্রদানের অনীহার কারণে মানুষ তথ্য থেকে বি ত হচ্ছেন। এ ছাড়াও তথ্য জানার নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরী না হওয়ায় আইনের সুফল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তৃণমূলের মানুষ। একই সঙ্গে সরকারের জনবান্ধব উদ্যোগ কার্যকারিতা হারাচ্ছে। তিনি আইনটি ব্যবহারে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সভা, সমাবেশ, সেমিনার ও অনুষ্ঠানে আইনটি সম্পর্কে জানানোর তাগিদ দেন। আর এমনটি করা গেলে সরকারি সেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে কোন নেতিবাচক বার্তা যাবে না।
তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক কাজে জড়িত বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) সৈয়দপুর কর্মএলাকার ফিল্ড ফ্যাসিলেটর মো. রতন সরকার জানান, তথ্য অধিকার আইনের প্রতি জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে রিইব। সরকারি দপ্তরের সেবা সম্পর্কে জনসাধারণকে আগ্রহী করতে নানা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশীরভাগ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনাগ্রহ এবং তথ্য গ্রহিতা ব্যক্তিকে ধমক ও জেরা করার ঘটনায় জনসাধারণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তবে এ আইনের বড় প্রতিবন্ধকতা মানুষের অজ্ঞতা। এ নিয়ে তাদের আগ্রহ থাকলেও আইনের ব্যবহার জানা নেই তাদের। এ জন্য জনসাধারণের মধ্যে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে মন্তব্য করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here