সৈয়দপুরে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সুযোগে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট

0
779
সৈয়দপুরে গত এক মাসে সোয়া দুই লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায় ভ্রাম্যমান আদালতের

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির
সুযোগে সৈয়দপুরে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া টাপেন্টাসহ নেশাজাতীয় ট্যাবলেট এখন প্রকাশ্যে বেচাকেনা হচ্ছে । এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। আর সহজে এসব ট্যাবলেট হাতে পেয়ে মাদকসেবীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আবার নেশার ট্যাবলেটের টাকা জোগাড় করতে ঘটাচ্ছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রশাসন ও ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সঠিক নজরদারি না থাকায় গোটা সৈয়দপুরে এ অবস্থা চলছে। অবিলম্বে এসব নেশার ট্যাবলেট বেচাকেনা বন্ধ না হলে পরিবেশ আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সৈয়দপুরের সচেতনমহল। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা। স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের সুত্র জানায়, সৈয়দপুরে শহর ও গ্রাম মিলিয়ে ১৫০টির বেশী ছোট বড় ওষুধের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের মধ্যে শহর ও গ্রাম মিলিয়ে ১৫/১৬ ব্যবসায়ী চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ওষুধ ব্যবসা। সুত্রটি জানায়, গত ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত সৈয়দপুরে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট টাপেন্টা, পেন্টাডলসহ বিভিন্ন সিরাপের বেচাকেনা গোপনে চললেও এখন তা ওপেন সিক্রেট। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে প্রচলিত মাদকদ্রব্য ফেন্সিডিল ও ইয়াবা, গাঁজা হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ব্যথা নিরাময়কারী টাপেন্টা ও পেন্টাডল ট্যাবলেটসহ সর্দি ও কাঁশির অন্যান্য সিরাপ মাদকসেবিদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। অধিক লাভের আশায় তাদের বেচাকেনা এখন জমজমাট।

এসব নেশার সাথে জড়িত কয়েকজন মাদকসেবি জানায়, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবার দাম অনেক বেশী। তাই কম দামে ট্যাবলেট কিনে আমরা নেশা করায় এসবেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানদাররা। দোকানীরা টাপেন্টা, পেন্টাডল ট্যাবলেটের দাম প্রকার ভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকা হলেও এখন ওইসব ট্যাবলেট বিক্রি করছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। এছাড়া সর্দি ও কাঁশির জন্য বিভিন্ন সিরাপের দামও এখন আকাশচুম্বি।

এদিকে মাদকসেবিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের মদিনা মোড়, শেরে বাংলা সড়কের তামান্না সিনেমা মোড়, সৈয়দপুর প্লাজার সামনে, সৈয়দপুর প্লাজার পিছনে তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে, সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল এলাকা, বাঁশবাড়ি আমিন মোড়, গোলাহাট,বাঙ্গালীপুর চৌমুহনী বাজার, শহরের উপকন্ঠ ঢেলাপীর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ওষুধের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এসব নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ও সিরাপ। সুত্র জানায়, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার শতশত মাদকসেবী এসব দোকান থেকে ট্যাবলেট ও সিরাপ সংগ্রহ করে নেশা পুরণ করছে। অভিযোগ রয়েছে ওইসব ওষুধ ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এবং কতিপয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ব্যবসা চালিয়ে আসলেও বরাবরই থাকছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সূত্র জানায়, নিয়ম রয়েছে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এসব ওষুধ বিক্রয় করা যাবেনা। অথচ ব্যবসায়ীরা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া নেশার ওষুধ বিক্রি করছেন। এ নিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি না করার নির্দেশনা অসাধু ব্যবসায়ীরা মানছেনা। সংশ্লিষ্টরা জরুরী ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিষ্টস্ সমিতি সৈয়দপুর উপ-শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম মোস্তফার সাথে কথা হলে তিনি বলেন ব্যবস্থাপত্র ছাড়া নেশাজাতীয় ওষুধ বিক্রি না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরেও কিছু ব্যবসায়ী নির্দেশনা পালন করছেনা। ফলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতেও পুলিশ দিনরাত আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। ওষুধের দোকানে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট বেচাকেনা বন্ধসহ নেশাখোরদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে চুরির সাথে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here