সৈয়দপুরবাসীর প্রত্যাশা ঘোষিত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন হবে

0
349

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদে রংপুর বিভাগের পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী স্থান পাওয়ায় সৈয়দপুরসহ এ অঞ্চলে মানুষের মধ্যে উন্নয়নের প্রত্যাশা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সৈয়দপুরের উন্নয়ন নিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছে এ জনপদের সর্বস্তরের জনগণ।
এবার মন্ত্রিসভায় রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি বাণিজ্য, লালমনিরহাট-২ আসনের নূরুজ্জামান আহমেদ সমাজ কল্যাণ ও পঞ্চগড়-২ আসনের নূরুল ইসলাম রেল মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। একইভাবে দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নৌ এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনের জাকির হোসেনকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে রংপুর বিভাগের পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কাছে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিশাল আশার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সৈয়দপুরের জন্য ঘোষিত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত শুরু ও শেষ করার আশা করছেন সৈয়দপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনরা।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জেলা সফরকালে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে গত বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে ভিডিও কনফারেন্সে সৈয়দপুরে ইকোনমিক জোন ও ১৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও গত বছরের ২১ অক্টোবর একইভাবে সৈয়দপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা জানান তিনি। বিগত দশম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নিত করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন। তাঁর এসব প্রকল্পের কাজ চলমান হলেও দ্রুত শেষ করার আশায় মুখিয়ে আছেন সৈয়দপুরবাসী। একইভাবে ভারত-বাংলাদেশ ঋণ চুক্তির আওতায় চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি হয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলওয়ে রুট চালুর প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পে ভারতীয় রেলওয়ে তাদের সীমানায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ অংশের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পে সরকার ৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। এছাড়াও বিদায়ী রেলপথ মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিলো সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় যাত্রীবাহি রেল কোচ নির্মাণের একটি নতুন রেলওয়ে কারখানা নির্মাণ। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের কেবল সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে উন্নিতকরণে গত বছরের আগস্ট মাসে একটি কমিটি গঠিত হলেও কমিটি এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। চিলাহাটি-ঢাকার মধ্যে দিনের বেলা আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও তা দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি। এসব ঘোষিত ও প্রতিশ্রুত প্রকল্পের দু’একটি কাজ চলমান হলেও অন্যান্য প্রকল্পের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সৈয়দপুরের সুশীল সমাজ মনে করছেন রংপুর বিভাগে নির্বাচিত সাংসদের ৫ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসবে। জনগণের আশা রংপুর অঞ্চলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তৎপর হলে প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ ও দৃশ্যমান হবে। সব মিলিয়ে সৈয়দপুরসহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। মানুষের মন্তব্য অতীতে এ অঞ্চলে এত বেশি সংখ্যক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন গতি ছিলো না। এবার সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন নয়, নতুন আরও উন্নয়ন কাজও হবে। এসবই এখন সৈয়দপুর জুড়ে আলোচিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল উন্নয়ন বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন মন্ত্রীসভায় রংপুর অঞ্চলের জন্য পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ জাতীয় সংসদের স্পিকার উপহার দিয়েছেন জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে, উন্নয়নে সৈয়দপুরও বঞ্চিত হবে না। এ অঞ্চলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সৈয়দপুর দিয়ে বিমানে যাতায়াত করেন। তাদের সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত দেখা সাক্ষাৎ হবে। তাই সৈয়দপুরের উন্নয়নের ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। সৈয়দপুরে চলমান ও প্রতিশ্রুত প্রকল্প দ্রুত শেষ করার তাগিদ থাকবে আমাদের। বিশেষ করে নতুন রেলমন্ত্রী সৈয়দপুরে রেলওয়ের প্রতিশ্রুত প্রকল্প এবং দিনের বেলা আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে কার্পণ্য করবেন না। আমাদেরও প্রচেষ্টা থাকবে প্রকল্প বাস্তবায়নে। নৌ প্রতিমন্ত্রীও চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করতে উদ্যোগী হবেন। কারণ স্থলবন্দরের গেজেট হলেও তা বাস্তবায়ন থমকে আছে। এসব অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তার আগ্রহ রয়েছে বলে আমরা জানি। কারণ এ বন্দর চালু হলে দিনাজপুর-নীলফামারী-রংপুর অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরী হবে। অতিতেও তিনি এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমত কাজ করেছেন। এবার তিনি নিজেই এসব কাজ এগিয়ে নেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ আহসান আদেলুর রহমান আদেল সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনিও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবেন। এছাড়াও সংসদের বিরোদী দলীয় নেতা জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বিরোধী দলের সংসদ উপনেতা জিএম কাদের এবং সংসদের চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর অঞ্চলের মানুষ। তারাও সংসদের ভিতরে-বাইরে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জোরালো ভূমিকা নেবেন। সব মিলিয়ে সৈয়দপুর তথা রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নের কথা বলার অনুকূল ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। এবার সৈয়দপুর আর পিছিয়ে থাকবে না। উন্নয়নে এবার আমরা সব পক্ষের পূর্ণ সহযোগিতা পাব। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এবার সৈয়দপুরের উন্নয়নে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা যাবে। এছাড়াও অন্যান্য উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমাদের ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। তিনি রংপুর অঞ্চলের পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কাছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমরা খুবই আশাবাদি বলে মন্তব্য করেন।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here