সৈয়দপুরে মাদকাসক্ত বন্ধুদের হাতে বন্ধু খুন; দুই ঘাতক গ্রেফতার

0
737
সৈয়দপুরে মাদকাসক্ত বন্ধুদের হাতে বন্ধু খুন
ছবিঃ মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে।

খবর৭১ঃ

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ মাদকাসক্ত বন্ধুদের হাতে খুন হওয়া ইমরানের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন ইমরানের শোকাহত স্ত্রী, বাবা-মা ও বোনেরা। এদিকে এ ঘটনায় জনরোষ থেকে বাঁচতে দুই হত্যাকারীর পরিবারের সদস্যরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে তাদের দেখা মিলছে না। গত বুধবার রাতে নিহত ইমরানের সৈয়দপুর শহরের হাওয়ালদারপাড়ার বাসভবনে দেখা যায় অন্যরকম পরিবেশ। বাড়ির প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে আছে,কোলে একমাত্র পুত্র সন্তানসহ স্ত্রী চাদনী, বড় বোন রাণী ও ডলি। তাদের অপেক্ষা কখন আসবে প্রিয় মানুষটির মরদেহ। বাড়ির ভিতরে কান্নার আওয়াজ মেলে সন্তানহারা মা সায়মুন বেগমের।

 

বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তারা। এ সময় স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে স্ত্রী চাদনী এবং বোন রাণী ও ডলি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ঘাতকদের শাস্তির আহবান জানান। ইমরানের স্ত্রীর কোলে ছিল একমাত্র পুত্র প্রিন্স (৪)। অবুঝ সন্তান লোকজনের উপস্থিতি দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। কোন কথাই বলেনি ওই অবুঝ সন্তান। ওই বাড়ির ঘরে গিয়ে দেখা যায় পুত্র শোকে মাতম করছেন মা সায়মুন। কান্না থামিয়ে তিনি বলেন মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে আসে ইমরান। বুধবার সকালে বাসা থেকে নাস্তা করে বের হয়। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। স্ত্রী চাদনী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন তাকে কেন হত্যা করা হলো তা তিনি জানেন না। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। ইমরানের বোন রানী ও ডলি বলেন তারা যদি আমার ভাইকে পঙ্গু করে দিত, তাও শান্তি পেতাম। ভাবতাম আমার ভাই আছে। কিন্তু কেন হত্যা করা হলো তাকে। ইমরান ঘাতক সুমনকে বিএসএফের কাছে ধরিয়ে দিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, এসব বিষয়ে তাদের জানা নেই। ইমরান নিহত হওয়ার বিষয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন ইমরান, সুমন, আকবর তিন বন্ধু ছিল।

তারা মাদক সেবনও করতো। তবে তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, কি এমন ঘটেছে যে, তাকে হত্যা করতে হবে। তারা এ হত্যার বিচার দাবি করেন। এদিকে বুধবার বিকেলে ও গতকাল বৃহস্পতিবার আকবর আলীর হাতিখানা এবং সুমনের নয়াবাজারের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের বাড়ী তালাবদ্ধ। অনেক খোঁজ করেও ওইসব পরিবারের সদস্যদের দেখা মেলেনি। উল্লেখ্য, বুধবারদুপুরে চিরিরবন্দর উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া গ্রামে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওইদিন মাদকসেবী দু’বন্ধু সুমন (২০) ও আকবর (১৯) অপর বন্ধু ইমরানকে (২৭) উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। নিহত ইমরান সৈয়দপুর শহরের হাওয়ালদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী মোক্তার আলী টেনিয়ার পুত্র। ইমরানের হত্যাকারী সুমন শহরের নয়াবাজার এলাকার কাল্লু বাবুর্চি ও আকবর আলী হাতিখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরী এলাকার সৈয়দ আলীর পুত্র। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ঘাতক দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা মোক্তার আলী বাদি হয়ে ২ জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা করেছে। এলাকার লোকজনের হাতে আটক ঘাতক সুমন স্বীকার করে বেশ কিছুদিন আগে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে সে।

এজন্য ভারতের মুর্শিদাবাদে কারাগারে আটক থাকার পর কয়েকদিন আগে দেশে ফিরে আসে। তার জেলে যাওয়ার কারণ হিসেবে ইমরানকে দায়ী করে সে। এরপর থেকে প্রতিশোধ নিতে ইমরানকে খুঁজতে থাকে। বুধবার সুমন তার বন্ধু আকবরকে সাথে নিয়ে ইমরানকে কৌশলে ডেকে নেয়। নেশা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে তাকে ওই এলাকায় নিয়ে আসে। এ সময় কথার ছলে একটি ধান ক্ষেতে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ইমরানকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করে। এক পর্যায়ে তারা ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকার লোকজন তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার চিরিরবন্দর অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান সরকার এলএলবি, পিপিএম’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক সুমন ও আকবর ইমরানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত শেষে লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

 

এ ব্যাপারে নিহতের পিতা মোক্তার আলী টেনি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানায় উপ-পরিদর্শক আশরাফুল আলম জানান, দু আসামীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here