সুন্দরবন রক্ষায় দ্বিতীয় দফায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’বিভাগের ৪ রেঞ্জে ৩ বছরের স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম শুরু

0
394

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা):
বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী শিকার,পাচার রোধ এবং বনজসম্পদের চোরাচালান বন্ধসহ বনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সুন্দরবন রক্ষায় নতুন করে বন বিভাগের ৩ বছর ব্যাপী স্পেশাল মনিটরিং এনালাইজিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুলস স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে চলবে এর কার্যক্রম। সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ কার্যক্রমে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বিকেলে মোংলার ফুয়েল জেটি সংলগ্ন বন বিভাগের রেস্ট হাউস ‘সুন্দরী’তে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ খুলনা সার্কেলের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ মদিনুল আহসান,চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিন কবির ও করমজল পর্যটন এবং বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আজাদ কবির।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম দু’বিভাগে মোট ৮টি টিমের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান ‘স্মার্ট প্যাট্রোলিং’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সাইবার ট্র্যাকিং পদ্ধতি। সুন্দরবনের বনজসম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এ স্মার্ট প্যাট্রোলিং (স্পেশাল মনিটরিং এনালাইজিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুলস) কর্মসূচিতে চারটি রেঞ্জের প্রতিটিতে দ’ুটি করে আটটি দলের প্রতিটিতে ১জন ফরেস্ট রেঞ্জার/সিনিয়রের নেতৃত্বে মোট ১৫ জন করে সদস্য রয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি টিমে থাকছে ল ,স্পিডবোট, ফাইবার বডি ট্রলার ও বিশেষ কেবিন ক্রুজার।
টহলকালে প্রতিটি টিম বন ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত সকল ধরনের অপরাধ দমন ছাড়াও বনের সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে। টহলের তথ্য-উপাত্ত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনায় অবস্থিত জিআইএস ল্যাবে সংরক্ষণ করা হবে। আর এ তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে প্রকাশিত হবে সুন্দরবন সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন।
অভিযানে আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ রোধ ও অপরাধীরা বনের কোন অংশে কি ধরনের অপরাধ করছেন তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সাজা দেওয়া আরো সহজতর হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি এসময় আরো বলেন,প্যানথেরা নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রস্তুতকৃত অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি টুলস ব্যবহৃত হবে স্মার্ট প্যাট্রোলিংয়ে। সংরক্ষিত সুন্দরবন এলাকা মনিটরিং,তথ্য সংগ্রহ এবং রিপোর্টিংয়ে এ প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন। এখ নপর্যন্ত বিশ্বের ৩১টি দেশের ১৪০টিরও বেশি স্থানে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর আগে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে সুন্দরবনে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘স্ট্রেনদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রথম ৬ মাস ব্যাপী স্মার্ট প্যাট্রোলিং পরিচালিত হয়। তখন এ কার্যক্রম সুন্দরবনে অপরাধী গ্রেপ্তারসহ বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। মূলত এর পরিপ্রেক্ষিতেই বন মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় বারের মত নিজস্ব অর্থয়ানে সুন্দরবন সুরক্ষায় শুরু করেছে স্মার্ট প্যাট্রোলিং। ধারণা করা হচ্ছে,এতে সুন্দরবন কেন্দ্রিক চোরাচালান,দস্যু দমন,বণ্যপ্রাণী পাচার, বনজসম্পদ ধ্বংস রোধ এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সর্বশেষ সরকারের ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম কি ধরনের ভূমিকা রাখে সেটাই এখন দেখার বিষয়। বন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা স্পেশাল মনিটরিং এনালাইজিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুলস স্মার্ট প্যাট্রোলিং সুন্দরবন সুরক্ষায় পথ দেখাবে সুন্দর আগামীর।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here