সুন্দরবনের জন্য হুমকি ২৪ শিল্পপ্রতিষ্ঠান

0
292

খবর৭১: সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান লাল শ্রেণিভুক্ত। যার সবগুলোই বাগেরহাটে। এসব লাল শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান পরিবেশের জন্য হুমকি এবং বাকিগুলো কমলা ও সবুজ শ্রেণিভুক্ত।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চ এমন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনটি দেখার পর এ বিষয়ে রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে বলেছেন আদালত।

আদালত বলেছেন, লাল শ্রেণিভুক্ত ২৪টি প্রতিষ্ঠান মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ করে। একই সঙ্গে রুল শুনানির জন্য ৯ মে দিন নির্ধারণ করেছেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কতগুলো শিল্পকারখানা রয়েছে তার তালিকা ছয় মাসের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ আদেশ অনুসারে পরিবেশ সচিব ও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষে তিনি এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শিল্পকারখানার অন্যত্র সরিয়ে নিতে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট করেন। গত বছরের ২৪ আগস্ট আদালত প্রতিবেদন চেয়ে রুল জারি করেন এবং নতুন কোনো শিল্পকারখানার অনুমোদন দেয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা দেন।

হাইকোর্টে জমা দেয়া এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৯৯৭ সালে ইউনসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐহিত্য হিসেবে ঘোষণা করে। পরিবেশদূষণ যাতে ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে এবং সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য যাতে কোনো প্রকার নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এ লক্ষ্যে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্ট এর চতুর্দিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবনসংলগ্ন ইসিএ এলাকায় সর্বমোট ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে বাগেরহাট জেলায় ৭৮, খুলনায় ৯২, সাতক্ষীরায় ২০টি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

২৪টি লাল শ্রেণির প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘রেড জোনে যেগুলো সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য রেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে রুল শুনানির সময় বিশেষজ্ঞ মতামতের দরকার। তাহলে এগুলো বেরিয়ে আসবে কতটুকু ক্ষতিকর। যে পর্যন্ত এটা করা যাবে না, সে পর্যন্ত বলা যাবে না যে এটা বাস্তবে ক্ষতিকর।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, আজকে একটি রিপোর্ট পেশ করে বলেছেন যে, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এই ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাটি, পানি ও বায়ুদূষণকারী (লাল শ্রেণির) ২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এই ২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারবে না। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (এনভায়রনমেন্টাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া -ইসিএ) অ্যার্ডিন্যান্স ১৯৯৯ অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ নেই।

এছাড়া বাকি যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এর থেকেও বেশি। ফলে আদালত এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে ফেলার আদেশ দেবেন কি দেবেন না, এ বিষয়ে ৯ মে পরবর্তী শুনানির জন্য ধার্য করা হয়েছে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here