সুন্দরগঞ্জে ‘দুলালী সুন্দরী’র ঝিলিক: জনতার ঢল

0
391

আবু বক্কর সিদ্দিক, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বেগুনী রংয়ের গাছে উৎপাদিত ভিন্ন রংয়ের ঊদ্ভাবিত এক প্রকার ধানের নাম করণ করা হয়েছে- ‘দুলালী সুন্দরী’। উপজেলা কৃষি অফিসার- কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম এ নাম করণ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসূমে উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের কৃষাণী দুলালী বেগম তাঁর ১৮ শতক জমিতে এ থানের চাষ করেন। বর্তমানে থোর আসা ক্ষেত দেখতে প্রত্যহ উৎসুক জনতার ঢল জমছে ঐ জমিতে। স্থানীয়রা জানান, ঐ গ্রামের মৃত নুরুজ্জামানের স্ত্রী দুলালী বেগমের জামাতা ঢাকায় অবস্থান করেন। সেখানে রাস্তায় পড়ে থাকা আনুমানিক ১’শ গ্রাম ওজনের ধান পায়। ধানগুলো পেয়ে শ্বাশুড়ী দুলালী বেগম বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে গত বছর মাত্র ১শতক জমিতে চাষ করেন। সে বারের উৎপাদিত সবগুলো ধান ফের বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে এবারের চলতি বোরো মৌসূমে ১৮ শতক জমিতে চাষ করেছেন দুলালী বেগম। বেগুনী রংয়ের ধান গাছগুলোতে থোর আসায় মানুষের চোখে পড়ে। ফলে দিন দিন ঐ জমিতে জনতার ঢল জমতে থাকে। এতে চার পাশের বোরো ক্ষেতে সেচের জন্য বাঁধা আইলগুলো মানুষের পদদলীত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ঐ ধান ক্ষেতে আমাদের প্রতিনিধি আবু বক্কর সিদ্দিকের উপস্থিতি দেখে ধানের নাম বলতে না পারায় দুলালী বেগম গা ঢাকা দেন। এসময় সংশ্লিষ্ট ব্লকের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা- জামিউল ইসলাম, রামজীবন ব্লকের- একেএম সরোয়ার হোসেন ও কাশদহ ব্লকের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ধানের নাম জানা নেই। উপজেলা কৃষি অফিসার- কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, রামজীবন ইউনিয়ন আইপিএম কৃষক ক্লাবের সদন্য- কৃষাণী দুলালী বেগম ২০১৭ সালের বোরো মৌসুমে মাত্র এক শতাংশ জমিতে কৌতুহলবশতঃ এই ধান চাষ করেন। তিনি তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে এ ধানের বীজ পেয়েছেন। চাষের পর ধানের রংয়ে ভিন্নতা দেখে তার কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। উৎপাদিত ধান থেকে ২০১৮ সালের বোরো মৌসুমে তিনি স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রতি গোছাতে একটি করে চারা দিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসে এ মৌসুমের বেগুনী ধান আবাদের বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ধান গাছগুলো দেখতে পুরোপুরিই বেগুনী। তিনি চাষীর ভাষ্য মতে তথ্য প্রদানকালে বলেন, পেনিকেল বা শিষটি সাধারণ উফশী ধানের মতই। গড়ে প্রতি গোছাতে ২৫ টি কুশি পাওয়া গেছে যেখানে পার্শবর্তী উফশী ক্ষেতে গড়ে ২১ টি। আর ৭ থেকে ১০ দিন পর পেনিকেল সাইজ, প্রতিটি পেনিকেলে কতটি ধান থাকে সেটি স্পষ্ট হবে। কুশির সংখ্যা যেহেতু তুলনামূলক বেশি ফলে ফলন বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতই অর্থাৎ ১’শ ৪০ দিন। চাষীকে সব ধরণের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি অফিনার আরো বলেন, সবটুকু বীজ সংগ্রহে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই বীজ সংরক্ষণের পাত্র প্রদান করা হয়েছে। বেগুনী ধানকে চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজ পরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজ পরিবারের বাইরে এই ধানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদন্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট যোদ্ধাদের সম্মানে একত্রে এ ধানের ভাত খেয়ে থাকত। আধুনিক গবেষণার বরাদ দিয়ে তিনি জানান, অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারনে এ ধানের রং বেগুনী হয়। ব্লু-বেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়া, ডায়াবেটিস ও অ্যালজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও এ ধানের ভাত কার্যকর। তাছাড়া, কুড়ো ও ক্ষুদ গৃহ-পালিত পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ধান বাংলাদেশে চাষাবাদে তেমন নজির না থাকলেও এ বিষয়ে গবেষণায় আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উপজেলা কৃষি অফিসার- কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান, সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা- জামিউল ইসলাম সার্বক্ষণিক ক্লোজ মনিটরিং- এর মধ্যে রেখেছেন। বেগুনী ধানে সুন্দরগঞ্জে চমক দেখা দিয়েছে। তিনি এ ধানের ব্যাপক গুণাগুণ তুলে ধরে বলেন- নতুন এ ধান কৃষাণী দুলালী বেগমের নামানুসারেই নাম করণ করা হয়েছে- ‘দুলালী সুন্দরী’।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here