সুতাং নদীতে অপরিকল্পিত বর্জ্য জীবনযাত্রায় মানবিক বিপর্যয়

0
332

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ক্রমাগত দূষণের ফলে সুতাং নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে হবিগঞ্জের সংকটাপন্ন সুতাং নদী পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এর প্রতিনিধিদল। গতকাল ১৪ মার্চ বেলা ১১টা থেকে সুতাং নদীর বিভিন্ন অংশ তারা ঘুরে। প্রতিনিধিদল দেখতে পান সুতাং নদীর পানি কালো হয়ে আছে এবং মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অসহনীয় দুর্গন্ধের ভেতর দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ওই সব গ্রামের প্রায় লাখ মানুষ। প্রতিনিধিদল সুতাং নদী পাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বিধ্বংসী ও দূষণের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন এলাকার জনগণ। ক্রমাগত দূষণের ফলে সুতাং নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর আগে একইদিন সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক বরাবরে হবিগঞ্জের খোয়াই নদী, পুরাতন খোয়াই, সুতাং, সোনাই নদীসহ অন্যান্য নদী সংরক্ষণের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার। জেলা প্রশাসনের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল। স্মারকলিপি গ্রহণ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, পুরাতন খোয়াই নদীকে ঘিরে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি শিল্পবর্জ্য দূষণরোধসহ অন্যান্য নদী রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশস প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাপার হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি এডঃ মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তাহমিনা বেগম গিনি, সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, এডঃ বিজন বিহারী দাস, ডাঃ আলী আহসান চৌধুরী পিন্টু, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, ইফতেখার হোসেন প্রমুখ।
বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আশংকা করছি, এভাবে নদী ধ্বংস করা হলে হবিগঞ্জে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ই নয়, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ও নেমে আসবে। তাই অনতিবিলম্বে নদী গুলোকে রক্ষা করার বিকল্প নেই। এদেশের নদী, বাতাস আর সার্বিক পরিবেশ রক্ষার আলোলনে সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি ও সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাহীনতার কারণে খোয়াইয়ের নাব্যতা কমে গেছে। এতে নদীটি দখল-দূষণের শিকার হয়ে হবিগঞ্জের পরিবেশ ও নদীনির্ভর জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে। কয়েক বছর ধরে খোয়াই ব্রীজের তলায় ও এর আশপাশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি দুর্গন্ধপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহর সংলগ্ন এলাকায় মাইলের পর মাইল নদীর তীর ও নদী অভ্যন্তর দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
পুরাতন খোয়াই নদীতে ভূমিখেকোদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে, বিভিন্ন অংশ দখল হয়েছে, পরিকল্পিত-অপরিকল্পিতভাবে ভরাটের শিকার হয়েছে, দূষণের শিকার হয়েছে পুরাতন খোয়াই। সব মিলিয়ে নদী সংশ্লিষ্ট হবিগঞ্জের মানুষের জন্য ব্যাপক দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটি।
কোম্পানির বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সুতাং নদী। কোম্পানীগুলোর বর্জ্য সহজেই খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে ছাড়া হচ্ছে। যে কারণে শিল্পবর্জ্য দূষণে সুতাং নদীটি হয়ে পড়েছে মৎস্যশূন্য, নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগসহ নানা অসুখে। আশংকাজনক হারে কমে গেছে ফসল উৎপাদন।
মাধবপুরে সোনাই নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে নদীর এক বিশাল অংশ দখল করে সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সেতুর জন্য বর্ষাকালে এই স্থাপনা হয়ে দাড়ায় এক বিরাট হুমকি। যা অবশ্যই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করছে বলে সহজে দৃশ্যমান।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here