সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর সতর্কতা

0
441
সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর সতর্কতা

খবর৭১ঃ ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জি থেকে ১৯ লাখ মানুষের বাদ যাওয়ার পর থেকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রেখেছে বাংলাদেশ। বিজিবির সীমান্তে কাজ করা কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দেরও সতর্ক করা হয়েছে। যেকোনো অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে জানাতে বলা হয়েছে।

বিজিবির সদরদপ্তর থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, শনিবার নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হওয়ার পর তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, নাগরিকপঞ্জির বিষয়টি সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় আর এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণ নেই। তবে আসামের অর্থমন্ত্রীর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আবার বলেছেন উল্টো কথা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের লোকদের’ তারা ফিরিয়ে নিতে বলবেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন আস্থা রাখছেন ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্যে। যদিও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা শরণার্থীর চাপে ভারাক্রান্ত দেশে আসামে ১৭ লাখ বাংলাভাষীর নাগরিকত্ব বাতিল নিয়ে নানা আশঙ্কা আছে। ভারত এদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কি না, এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা আশঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে।

এর মধ্যে আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া সীমান্তগুলোতে বিজিবির টহল জোরদারের খবর এসেছে। সীমান্তরক্ষী
বাহিনীর কর্মকর্তারাই এই বিষয়টি জানাচ্ছেন নীলফামারীর চিলাহাটী থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫১ কিলোমিটার সীমান্তে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদার করেছে ৫৬ বিজিবি। সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য ও স্থানীয় জনগণকে বিজিবির পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। পুলিশও রয়েছে সতর্ক।

নীলফামারী ৫৬ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মিজানুর রহমান খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভারতের আসাম রাজ্যের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিকরা সীমান্ত গলিয়ে যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

নীলফামারী পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন বলেন, ‘শুধু আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়ারাই নয়, মাদক ও জঙ্গিসহ যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে পুলিশ রয়েছে জিরো টলারেন্সে।’

একই ধরনের সতর্কতার তথ্য রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট সীমান্তেও। বিজিবির জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ হোসেন জানিয়েছেন, আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বিজিবি সদস্যরা।

এই সতর্কতা আরও আগে থেকেই ছিল বলে জানিয়েছেন এই বিজিবি কর্মকর্তা। বলেন, ‘২০১৮ সালে এনআরসির খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিজিবি হেড কোয়ার্টার্সের নির্দেশে সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিজিবি। পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পর মৌখিকভাবে আবারও সতর্কতা জারি করা হয়। সে অনুযায়ী সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিজিবি।’

‘এখন পর্যন্ত কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, তবে আসাম থেকে মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইলে বা ভারত অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার জন্য বিজিবি সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন ঢাকার অবস্থান এখন পর্যন্ত ঠিকই আছে। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ ঢাকার একটা বিষয় করণীয় আছে, সেটা হচ্ছে সতর্ক থাকতে হবে।’

‘এটা নিয়ে উদ্বেগ করে রাজনীতি করা ঠিক হবে না। ভারত তো বলছে এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের এটা নিয়ে আগ বাড়িয়ে উদ্বেগ করা ঠিক হচ্ছে না। তারা বলছে, তারা এটার সমাধান করবে।’

নাগরিকপঞ্জি নিয়ে যা যা হচ্ছে

গত শনিবার ভারতের আসামে বহুল আলোচিত নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগে যারা ভারত গেছেন, তারাই সে দেশের নাগরিক। আর এর পরে যারা সেখানে গেছেন, তাদেরকে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

এই নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ভারতেই আছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। আসাকে যে ১৯ লাখ বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে ১৭ লাখের বেশি বাংলাভাষী, যাদের আবার ১১ লাখের বেশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বেশি সংখ্যক হিন্দুদের বাদ পড়া, সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার এমনকি কারগিল যুদ্ধে অবদান রাখা সেনা সদস্য ও তার পরিবারের এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর তালিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হচ্ছে। যাদেরকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, তাদের ভবিষ্যত কী হবে, সেটি স্পষ্ট নয়। যদিও বলা হচ্ছে ১২০ দিনের মধ্যে তারা নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আপিল করতে পারবেন।

আপিলেও যারা নাগরিকত্ব পাবেন না, তারা কোথায় থাকবেন, কী অবস্থায় থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্নের সুরাহা হচ্ছে না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আর আসামের রাজ্য সরকারের বক্তব্য ভিন্ন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সে দেশের সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, বাদ পড়াদের সিংহভাগ বাংলাদেশ থেকে গেছেন এবং তাদের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলতে চান তারা।

হিমন্ত বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলব এবং তাদের লোকদের ফিরিয়ে নিতে বলব। কিন্তু যতদিন ফিরিয়ে না নেয়া হচ্ছে, ততদিন আমরা তাদের ভোটাধিকার দেব না, তবে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে’।

অবশ্য কাউকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হবে না, এই কথাটিও জোর দিয়ে বলছেন হিমন্ত। বলেন, ‘এনআরসি তালিকায় নাম নেই মানে এটা নয় যে, তাদের বিদেশি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। তাদের ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ভারতের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে তাদের অংশ নিতে দেওয়া হবে না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ্জ্জুামান খাঁন কামাল অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে কারো ভারতে যাওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সাফ বলেছেন, ‘সুস্পষ্টভাবে আমরা বলতে চাই একাত্তরের পরে আমাদের বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে যায়নি, যারা গিয়েছেন তারা আগেই গিয়েছেন। ওদেশ থেকে যেমন এখানে এসেছে এখান থেকে ওখানে গিয়েছেন। কাজেই এইখানে আমাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ হয়নি। আর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়ার আগে ঢাকা কোনো মন্তব্য করতে চায় না বলেই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here