সিসিকে মেয়র পদে ৯: “চ্যালেঞ্জে আরিফ, সুবিধাজনক অবস্থানে কামরান”

0
352

সিলেট ব্যুরো: ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দানের শেষ দিনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) এর মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বৃহস্পতিবার ৭ জন ও বুধবার ২ জন মেয়র প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই শেষ হয় মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ। মেয়র পদে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। বিএনপির একক প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম নাগরিক কমিটির ব্যানারে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম ২য় বৃহৎ শরিক দল জামায়াত ইসলামীর সিলেট মহানগরীর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট নাগরিক ফোরামের ব্যানারে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়াও সিপিবি-বাসদের আবু জাফর, ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিন, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখারের আহমদ দিনারের মামা এহসানুল হক তাহের ও সমাজসেবী মোক্তাদির হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
উল্লেখ্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের মোট ৩ লক্ষ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার আগামী ৩০ জুলাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
আরিফের পদত্যাগ ও মনোনয়ন দাখিল ঃ
আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৩ মিনিটে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ জেড এম নুরুল হকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পূর্বে নগর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন আরিফ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। যত দিন দায়িত্বে ছিলাম, তত দিন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। তাই আসছে নির্বাচনে মানুষ আমাকে ভোট দেবে বলে বিশ্বাস করি। এসময় তিনি দায়িত্ব পালনকালে ভুল-ত্রুটির জন্য নগরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করেন। পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে নগর ভবর ত্যাগ করেন। মাজার জিয়ারতের পর তিনি নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
মনোনয়ন দাখিল শেষে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট মহানগরীর ভোটাররা আমাকে আবারও মেয়র পদে দেখতে চায়। যদি নির্বাচন যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।’ এছাড়াও দলের নেতাকর্মীসহ সিলেটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ দল। এখানে মনোনয়নের লড়াই থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে সিলেট বিএনপি সবসময় ঐক্যবদ্ধ।’
মনোনয়নপত্র জমাকালে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামিম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়ন দাখিল করলেন কামরান ঃ
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত একক প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। এসময় হাজারো নেতাকর্মীদের নৌকা ও কামরানের নামে শ্লোগান দেন।
মনোনয়নপত্র জমাকালে কামরানের সাথে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
মনোনয়নপত্র জমাদানের পূর্বে কামরানের বাসায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে তিনি মানিক পীর (র.) গোরস্থানে মা-বাবার কবর জিয়ারত করেন। কবর জিয়ারতের পর হাজারো নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মনোনয়ন জমাদানের উদ্দেশ্যে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান সাবেক মেয়র কামরান।
জামায়াত নেতা জুবায়েরের মনোনয়ন দাখিল:
এদিকে বুধবার বিকেলে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে সিলেট নাগরিক ফোরামের ব্যানারে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সিলেটে জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দিতে বুধবার ঢাকায় আলোচনায় বসেন কেন্দ্রীয় ২০ দলীয় জোট। সেখানে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় জোটের বৈঠক। সেখানে সিলেটে জামায়াত নেতা এডভোকেট জুবায়েরের প্রতিদ্বন্ধিতার ব্যাপারে অনড় থাকার কথা জানিয়ে বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম। ফলে সিলেটে জামায়াতের প্রতিদ্বন্ধিতার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের কথা জানান দিল জামায়াত। এখানে জামায়াতের প্রতিদ্বন্ধি থাকলে আরিফকে আরো চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে বলে মনে করেন অনেকেই।
বদরুজ্জামান সেলিমের মনোনয়ন দাখিল:
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাগরিক কমিটির ব্যানারে বৃহস্পতিবার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সিলেট নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যার্থ হয়ে নেতাকর্মীদের চাপে তিনি প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। নির্বাচনের কারণে যে কোন ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানান তিনি। বদরুজ্জামান সেলিমের মনোনয়ন পত্র দাখিলের কারণে অনেকটা চাপের মুখে পড়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত বদরুজ্জামান সেলিম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন কি না তা জানতে প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
খেলাফত মজলিশের প্রার্থীর ডিগবাজী:
২০ দলীয় জোটভুক্ত দল খেলাফত মজলিশ মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে তাদের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেএম আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আলোচনায় রাখলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেয়নি তারা। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীতা থেকে সরে আসার ঘোষনা দেন তিনি। এই সময় আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দেন তিনি। যেখানে কেন্দ্রীয় জোট একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ সেখানে খেলাফত মজলিসের এভাবে বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থনকে অনেকেই ডিগবাজী বলে মনে করছেন।
অন্যান্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল:
এদিকে আওয়ামীলীগ বিএনপি এবং জোট ছাড়াও মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন একাধিক প্রার্থী। তারা হলেন- সিপিবি-বাসদের আবু জাফর, ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী জসিম উদ্দিন, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের মামা যুব সংগঠক এহসানুল হক তাহের ও সমাজসেবী মোক্তাদির হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here