সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ শিগগিরই চালু হচ্ছে না

0
245

খবর ৭১ঃ সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ শিগগিরই চালু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট অঞ্চলের বিভাগীয় কৌশলী মো. মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতির মাত্রা বেশি হওয়াতে উদ্ধার কাজে আরও সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘ট্রেন কখন চালু হবে এখন বলা যাবে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লাইনচ্যুত ১১ টি বগির মধ্যে এ পর্যন্ত ৬টি বগি উদ্ধার করা হয়েছে। আরও বাকি ৫টি বগি উদ্ধার কাজ চলছে। এর মধ্যে ২টি বগির অবস্থার খুবই খারাপ’। এ দুটি তুলতে বেশ সময় লাগবে বলে যোগ করেন তিনি। এদিকে শুক্রবার সকালে ট্রেনের উদ্ধার কাজ পরিদর্শনে আসেন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সংসদীয় এলাকার এমপি সাবেক চীফ হুইপ ড.উপাধ্যক্ষ মো.আব্দুস শহীদ,জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম,পুলিশ সুপার মো.শাহজালালসহ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। ঘটনাস্থল থেকে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি রেলপথ মন্ত্রী মো.মুজিবুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন রেল মন্ত্রী জানান দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে।

ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকৌশলী মুজিবুর বলেন, রাতে সাতগাঁও রেল স্টেশন অতিক্রমের পর ‘ট্রেনের একটা আন্ডারগিয়ার বা ট্রেনের ‘পুলিং রড’ ভেঙে লাইনের ‘পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রসিং’ এর কয়েকটি ব্লকের মধ্যে পড়ে যায়। এতে ব্লক ভেঙে ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হয়।

শুক্রবার সকাল ৬টায় কুলাউড়া ও আখাউড়া থেকে আসা দুটি রিলিফ ট্রেন উদ্ধার কাজ শুরু করে। টেনটি উদ্ধার করে যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে বেশ সময় লাগবে।

তিনি বলেন, এই ট্রেনে সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সহ সত্বাধিক যাত্রী। তবে তিনিসহ সাধারণ কোনো যাত্রী বড়ধরনের আহত হননি।

তবে আশা করা যায় বিকেল ৫টা নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। একই কথা বলেন- বিকেল পাঁচটার দিকে লাইন চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা সিনিয়র সাব-ইঞ্জিনিয়ার দুলাল চন্দ্র দাস।

উপবন ট্রেনের গার্ড(পরিচালক) মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন- রাত ১২.৪৮ মিনিটে বিকট শব্দ শুনতে পাই। সাতগাঁও রেলস্টেশন পার হয়ে আউটার স্যিগনাল এলাকায় ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হয়। তিনি বলেন-ট্রেনে মোট ১৭টি বগি ছিল। এর মধ্যে সামনের ইঞ্জিনসহ ও পেছনের অর্থপ্রতিমন্ত্রীকে বহনকারী বগি পড়েনি। শুধু মাঝখানের বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়েছে। ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হলেও ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি অক্ষত রয়েছে। দূর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উপবন এক্সপ্রেসের যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, রাত পৌণে একটার দিকে একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। কয়েকবার ঝাকুনি দেয়। এরপরই দেখি ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে।

শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের স্টেশনের মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ১২টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি শ্রীমঙ্গল স্টেশন ছেড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, ‘ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ট্রেনটির কয়েকশ’ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। ট্রেনটিতে পেছনের বগিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও ছিলেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর পিএস মুঠোফোনে বিষয়টি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে  জানান। এরপর শ্রীমঙ্গল থানার ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছে অর্থ প্রতিমন্ত্রীকে একটি প্রাইভেট গাড়িতে করে হবিগঞ্জ জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবলে এলাকায় পুলিশ স্কটে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে উনার নিজস্ব গাড়িতে করে সড়ক পথে তিনি ঢাকায় ফিরেন।’

দুর্ঘটনার পর রাতে ট্রেনের যাত্রী সাধারণ চরম দূর্ভোগে পড়েন। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কেএম নজরুলের নেতৃত্বে পুলিশের চারটি টিম দূর্ঘটনাস্থলে রাতভর উপস্থিত থেকে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহনের সুব্যবস্থা করে দেন।

অনেক রেল যাত্রী জানান,সাতগাঁও স্টেশন বাজার থেকে চড়ামূল্যে ভাড়া দিয়ে শত শত ট্রেন যাত্রীরা সিএনজি অটোরিক্সা যোগে শ্রীমঙ্গল শহরে এসে হানিফ-শ্যামলী বাস কাউন্টারে ভিড় জমান। পরে যাত্রীরা সেখান থেকে প্রত্যেকের গন্তব্যে রওনা হন।

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here