সিটি নির্বাচনের মাঠে বিতর্কিত ১১ প্রার্থী

0
448
সিটি নির্বাচনের মাঠে বিতর্কিত ১১ প্রার্থী

খবর৭১ঃ আগের মেয়াদে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তাদের মাথায়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার। আবার কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদখলসহ আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এরপরও তাদের মনোনয়ন জুটেছে। ঢাকা ও উত্তর দক্ষিণে কাউন্সিলর পদে নিজ দলের সমর্থন পাওয়া এই ১১ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরিক দল জাতীয় পার্টির নেতা।

গত পাঁচ বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অভিযোগ। এদের মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৫ জন আর দক্ষিলে ৬ জন রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা, চাঁদাবাজি, ভূমিদখলের মতো গুরুতর অপরাধ। অপকর্মের কারণে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তাও নষ্ট হয়েছে তাদের। এরপরও তারা কাউন্সিলর পদে লড়তে ভোটের মাঠে নেমেছেন। এরইমধ্যে তাদের মনোনয়ন বৈধতাও পেয়েছে।

ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধান বলছে, ঢাকার দুই সিটিতে বিতর্কিত প্রার্থী মোট ২০ জন। এদের ৯ জন কোনো দল থেকে মনোনয়ন পাননি। আর একজনকে কাউন্সিলর পদ থেকে আগেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাকি ১১ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে ৯ জনকে। আবার একজন জাতীয় পার্টি এবং বাকি একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

ঢাকা উত্তরের ৯ জন নানাভাবে বিতর্কিত। তারা হলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ৬ নম্বরের রজ্জব হোসেন, ৭ নম্বরের মোবাশ্বের চৌধুরী, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদুর রহমান ইরান, ৩০ নম্বরের আবুল হাসেম হাসু, ৩১ নম্বরের শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ৩২-এর কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, ৩৩ নম্বরের তারেকুজ্জামান রাজীব ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জোটেনি ৬ নম্বরের রজ্জব হোসেন, ৭ নম্বরের মোবাশ্বের চৌধুরী, ৩২ এর কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, ৩৩ নম্বরের তারেকুজ্জামান রাজীব ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমের।

বিতর্কিত হয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদুর রহমান ইরান, ৩০ নম্বরের আবুল হাসেম হাসু, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম সেন্টু। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিসুর রহমান নাঈম।

বিতর্কিতদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল মোস্তফা। তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু এই কাউন্সিলর বিতর্কিত হয়েছেন তার ছেলে এবং ছেলের বউর কারণে। জামাল মোস্তফার ছেলে রফিকুল ইসলাম রুবেল ও তার স্ত্রী তানজিলা ঢাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের ভাষ্য, রুবেল ঢাকার সেরা ৪৫ জনের একজন শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ১১৫ পিছ ইয়াবাসহ পল্লবী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন রুবেল ও তার স্ত্রী।

২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ফরিদুর রহমান ইরান। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকা, ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখলের অভিযোগ। এছাড়া মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

বাকিদের মধ্যে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে আবুল হাসেম হাসুর। ঢাকা আদাবর-শ্যামলি এলাকার বাসিন্দারা তাকে চেনেন ‘দখলদার’ হিসেবে। ভাই কাসুকে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন রীতিমতো একটি দখলদার বাহিনী। ‘হাসু-কাসু’ বাহিনী নামে পরিচিত এই বাহিনীর মাধ্যমে স্থানীয় বিপুল পরিমাণ জমি দখলের বিপুল পরিমাণ অভিযোগ রয়েছে।

অপকর্মের দায়ে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ বহিষ্কৃত হাসুর বিরুদ্ধে আদাবর থানা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রিয়াজ মাহমুদকে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলাও হয়েছে।

দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে পারেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম। তার বিরুদ্ধে জমিদখল, চোরাকারবার, চাঁদাবাজি, আটকে রেখে অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। বিমানবন্দর, কাওলা, শিয়ালডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজির জন্য রয়েছে নাঈমের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। বাহিনীটি ‘নাঈম খলিফা’ হিসেবেও পরিচিত। স্থানীয়রা নাঈমকে চেনেন ‘ত্রাস নাঈম’ নামে।

ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসা আরেক বিতর্কিত কাউন্সিলর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম সেন্টু। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেন্টুকে এবারও দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

জনশ্রুতি রয়েছে ঢাকার ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোর জন্মদাতাদের একজন তিনি। শুদ্ধি অভিযানের সময় অন্তরালে যান। সম্প্রতি আবার প্রকাশ্যে আসেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তিনি সিটি করপোরেশনের ১২ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এজন্য তাকে শোকজও করা হয়। এ ছাড়া ওয়ার্ডে তেমন কোনো উন্নয়নমূলক কাজও করেননি বলে নাগরিকদরে অভিযোগ।

ঢাকা দক্ষিণের ভোটেও বিতর্কিত ৬ কাউন্সিলর

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের সাঈদ খোকন। তবে কাউন্সিলরদের মধ্যে বিতর্কিত ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। বিতর্ক এবং বিতর্কের কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা হারিয়েও মনোনয়ন পাওয়ারা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের আনিসুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রাফুজ্জামান, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন আহমদ রতন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হাসান (পিল্লু), ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে নূরে আলম ও ৫৬ তে মোহাম্মদ হোসেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আবারও লড়ছেন আনিসুর রহমান। তার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অভিযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালিদ মাহমুদ ভুইয়ার নানা অপকর্মের সঙ্গে তার জড়িত থাকার জনশ্রুতি রয়েছে।

আরামবাগ ও সবুজবাগ এলাকার ক্যাসিনো ও জুয়ার আড্ডার নিয়ন্ত্রকদের অন্যতম হিসেবে পরিচিতি রয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রাফুজ্জামানের। স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ অবমাননার কারণে কাউন্সিলর পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মমিনুল হক সাঈদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। নানা বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আশ্রাফুজ্জামানকে।

২০ নম্বর ওয়ার্ডের পুনরায় ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়া ফরিদ উদ্দিন আহমদ রতনের বিরুদ্ধে গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। রতনসহ ক্লাবটির একাধিক নিয়ন্ত্রক রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। শুদ্ধি অভিযানকালে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে করপোরেশনের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটসহ আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর মো. হাসান (পিল্লু)। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ভাগিনা। ওয়ার্ডের আওতাধীন এসব এলাকার মালবাহী যানবাহন থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার নামে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগিনা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননা কেউ।

কামরাঙ্গীরচরের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নূরে আলম নানা ভাবে বিতর্কিত। করপোরেশনের কাজ উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে স্থানীয়দের থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর তাতে ৮০ শতাংশ জনপ্রিয়তা খুইয়ে বসে আছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি স্যুয়ারেজ পাইপ বসাতে গিয়ে বাড়ি প্রতি আড়াই থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত করে চাঁদা আদায় করেছেন নূরে আলম। নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে মাসে ১ লাখ টাকা মাসোয়ারা পান বলেও সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় এক সাংবাদিকের জমিতে স্যুয়ারেজ পাইপ বসানো নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। নূরে আলম জোরপূর্বক ওই সাংবাদিকের জমিতে স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর চেষ্টা করেন। এবিষয়ে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।

এছাড়া ১৯৯১ সালে স্থানীয় টেকেরহাটি এলাকার সোনা মিয়া মসজিদ ৩৬ কাঠা জমি বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, সে সময় নূরে আলম কাউন্সিলর ছিলেন না। আর ওই জমিটি ছিল ওয়াকফর। যা বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তৎকালীন ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে আঁতাত করে তিনি এ জমি বিক্রি করেন। বিষয়টি নিয়ে নানা সময় বিতর্ক তৈরি হলেও নূরে আলম কাউন্সিলর হওয়ার পর কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে সাহস পাননা।

ক্ষমতাসীন দলের হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে মাসে ৪ লাখ টাকা, খোলামোড়া নৌকা ঘাট, টেম্পুসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা আদায়ের বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচরের খাল দখল করে স্থাপনা তৈরিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কাউন্সিলরের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here