সারা দেশে বজ্রপাতে নিহত আরও ১০

0
259

খবর ৭১: বিগত বছরগুলোর মতো এবছরও প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর এই মিছিল যেন শেষ হবার নয়। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে- বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই খেতেখামারে খেটে খাওয়া মানুষ। এবং তাদের অনেকেই কৃষিকাজ করার সময় বজ্রাঘাতে মারা যাচ্ছেন। গত বছর এপ্রিলে বজ্রপাতে যেখানে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে এ বছর সেই সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। যা দ্বিগুণেরও বেশি।

বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিলের ধারাবাহিকতায় সোমবারও (৭ মে) দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ১০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এদিন বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রতিবেদনটি ব্রেকিংনিউজ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শালীহর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. রুস্তুম আলী মুনশী (৭০) ধানকাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।

পরিবার সূত্র জানায়, শালীহর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেরে মো. রুস্তুম আলী মুনশী (৭০) সোমবার সকালে ধান কাটার জন্য ক্ষেতে যান। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বজ্রপাতে নিহত ধানক্ষেতে মারা যান। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার সৈয়দা মাসরুবা তানজিন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নিহত মোয়াজ্জিন রুস্তুম আলী একজন বর্গাচাষি ছিলেন। অন্যের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে গেছেন।

একই দিন সকাল ৯টার দিকে জেলার সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে শারমিন আক্তার (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শারমিন উপজেলার ৩নং কৈচাপুর ইউনিয়নে রুহী পাগারিয়া গ্রামের সোহেল মিয়ার মেয়ে ও নিচপাড়া এসএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

পরে তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শারসিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেরপুর: জেলায় পৃথক বজ্রপাতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালের দিকে এসব ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার হালগড়া গ্রামের বড়বাড়ির বাসিন্দা মৃত আবু শেখের ছেলে আব্দুর রহিম (৪০) নামে এক কৃষক মাঠে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সকাল পৌনে ১০টার দিকে নকলা উপজেলার মোজারচর গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবক মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান।

একই সময়ে শ্রীবরদী উপজেলায় সকাল ১১টার দিকে মাঠ থেকে গরু চড়াতে গিয়ে কুব্বাছ আলী (৬০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছে। তিনি উপজেলার বকচর গ্রামের জমর উদ্দিনের ছেলে।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে বজ্রপাতে বরুনা এলাকার মফিজ মিয়া (৩০) ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে আরও তিন শ্রমিক আহত হয়েছেন। নিহত মফিজ উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুণা গ্রামের ইসলাম মিয়ার ছেলে।

সোমবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুনা বাইক্কা বিল এলাকায় ধানকাটা অবস্থায় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

আহতরা হলেন একই এলাকার নজির মিয়া (৬০), রফিক মিয়া (৫০) ও রশীদ মিয়া (৩৬) আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত কৃষক নব কুমার দাস (৬০) উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের মৃত-নন্দলাল দাসের ছেলে।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গ্রাম পার্শ্ববর্তী ছায়ার হাওরে ধানকাটার সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে আকস্মিক বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নব কুমার।

এ সময় আশপাশের কৃষকরা এসে তাকে উদ্ধার করে শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিলোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের অনুমতিক্রমে ময়নাতদন্ত ছাড়া নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে দেয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় হাওরে বজ্রপাতে ২ ধানাকাটা শ্রমিক নিহত এবং অপর এক শ্রমিক আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- কবিরপুর গ্রামের মৃত নাদু বৈষ্ণবের ছেলে অধীর বৈষ্ণব (২৭) ও তেলঘরি গ্রামের বীরেশ্বর বৈষ্ণবের ছেলে বসু বৈষ্ণব (৩২)। আহত ধানকাটা শ্রমিক তেলঘরি গ্রামের হরিচরণ বৈষ্ণবের ছেলে কৃষ্ণধন বৈষ্ণব (৩২)।

সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বৃন্দা চিত্তা ধান কাটতে গিয়ে তারা বজ্রপাতের শিকার হন।

বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় বৃন্দা চিত্তা হাওরে ধানকাটার সময় বজ্রপাতের শিকার হন তিন শ্রমিক। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অধীর বৈষ্ণব। গুরুতর আহতাবস্থায় বসু বৈষ্ণবকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। আহত কৃষ্ণধন বৈষ্ণবকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

কুমিল্লা: কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে রাহেনা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউয়িনের পূর্ব বামপাড়া গ্রামের সিরাজুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তানের জননী।

সোমবার সকালে উপজেলার ওই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবার ও এলাকাবাসীরা জানায়, সোমবার সকালে নিজেদের পুকুর পাড়ে আম কুড়াতে গেলে তার ওপর বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here