খবর৭১ঃ
সাভারের সিআরপি রোডের একটি বহুতল আবাসিক ভবনের ছাদের বাগানের গাছ কেটে ফেলা সেই নারীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ওই নারীর নাম খালেদা আক্তার লাকী। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত লাকীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার এডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম মারুফ হোসেন চৌধুরীর আদালতে সেই নারীর পক্ষে তাঁর আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী (বার) সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান রচি জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক এ আসামির জামিন দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘মামলাটি স্পর্শকাতর, এই মুহূর্তে জামিন দেওয়া সমীচীন হবে না।’ এরপর আইনজীবী আগামী রবিবার জামিন শুনানির দিন নির্ধারণ করার নিবেদন করলে বিচারক আগামী রবিবার জামিন শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের সিআরপি রোডের বাড়ি থেকে ওই নারীকে আটক করা হয়। গত মঙ্গলবার গাছ কাটার ঘটনাটি ঘটে। গাছ কাটার সে ভিডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওটি পোস্ট করেছেন গাছের মালিক সুমাইয়া হাবিব।
সুমাইয়া হাবিব ভিডিওটি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে শেয়ারের পাশাপাশি একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখেছেন। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘কখনো কি শুনছেন মানুষ গাছ অপছন্দ করে? গাছ পরিবেশ নষ্ট করে? এই মহিলার গাছ পছন্দ না। তার বক্তব্য, আমাদের গাছ ছাদের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। তাই এই মহিলা আমাদের সব গাছ কেটে ফেলছে। কী অপরাধ ছিল গাছের???? কী অপরাধ ছিল????? কেউ বলতে পারবেন??’
‘আমার মা গাছ অনেক পছন্দ করেন, তাই ছাদের এক কোনায় আমরা কিছু গাছ লাগাইছিলাম, আর এই মহিলা আমাদের সাথে শত্রুতা করে আমাদের লাগানো গাছগুলা কেটে ফেলল। এই বিল্ডিংয়ে আমরা ২টা ফ্ল্যাট কিনেছি। সবাই যার যার ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে থাকে। ছাদে সবারই অধিকার আছে। আমরা আমাদের অধিকার থেকে কিছু গাছ লাগিয়েছি ছাদের একটা কোনায়। কারণ, আমরা ভাবতেও পারিনি গাছ মানুষ অপছন্দ করতে পারে। গাছ তো সৌন্দর্য বাড়ায়। আর তারা বলে আসছে, আমাদের গাছ নাকি ছাদের পরিবেশ নষ্ট করে দিছে। তারা অকারণে অন্যায়ভাবে আমাদের জীবন্ত এবং ফল ধরন্ত গাছগুলো কেটে ফেলল। আবার তার ছেলে ১০-১২ জন মাস্তান নিয়ে আসছে আমাদের ওপর হামলা করার জন্য। আমাদের একটাই অপরাধ, আমরা গাছ ভালোবাসি। তাই শখ করে গাছ লাগিয়েছিলাম। আমরা তো অন্যের জায়গায় গাছ লাগাই নাই। আমরা আমাদের অধিকার থেকে গাছ লাগাইছিলাম। আমার মা এই গাছগুলোরে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে। আমরা গাছগুলোকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতাম।’
‘মানুষ কীভাবে এতটা নিচে নামতে পারে??? গাছ তো তাদের কোনো ক্ষতি করে নাই। পুরা ছাদই তো ফাঁকা। এই মাগরিবের আজানের সময়, ওনার মাথায় সুন্নতি হিজাব, কীভাবে পারল এই ধরন্ত গাছগুলো কেটে ফেলতে। এর হয়তো কোনো বিচার হবে না। তবে আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহই বিচার করবে।’
সুমাইয়া হাবিব সাংবাদ মাধ্যম কে বলেছিলেন, ‘আমাদের তারা হিংসা করত। আমাদের এখানে দুইটা ফ্ল্যাট আর তাদের একটা। আমরা গাছ লাগাইছি দেখে তাদের গা জ্বলত। তাদের ছেলে মস্তানি করে। সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সেই ছেলে আমাদের গাছ ভেঙে ফেলত। একদিন তাদের উদ্দেশ্য না করে বলছিলাম, যারা আমাদের গাছ ভাঙতেছে তাদের হাত যেন অবশ হয়ে যায়। এতেই হয়তো শত্রুতা করল।’