সাজা হলে ক্ষমার আবেদনে রাষ্ট্রপতি মাফ করবেন: কাদের

0
398

খবর৭১: দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, রাষ্ট্রপতি দয়াশীল মানুষ, ক্ষমা চাইলে তিনি যে আবেদন গ্রহণ করবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের আগের দিন ‍বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।

এর কিছুক্ষণ আগে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন খালেদা জিয়া। ওই সংবাদ সম্মেলনে এই মামলায় আনা সব অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন ন্যায়বিচার হলে তিনি খালাস পাবেন। তবে ‘ন্যায়বিচার’ না পাওয়ার আশঙ্কাও করেন তিনি।

বিএনপি প্রধানের এই সংবাদ সম্মেলনকে রায়ের আগে ‘মায়াকান্না’ এবং আদালতকে ‘বিব্রত’, ‘বিভ্রান্ত’ করার অপচেষ্টা হিসেবেও দেখেন কাদের। তার মতে, রায়ের আগে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করা নজিরবিহীন।

কাদের বলেন, ‘রায়কে আইনিভাবে মোকাবেলা না করে, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে তিনি (খালেদা জিয়া) অপরাজরনীতির কৌশল অবলম্বন করেছেন। নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য পুরো জাতিকে জিম্মি করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।’

‘তিনি রায়ের আগে সংবাদ সম্মেলন করে, মিথ্যাচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আদালতের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।’

কাদের বলেন, ‘এত হতাশ হওয়ার কী আছে? এই রায়ের পর আপিল করার ব্যাপার আছে। তা না হলে রাষ্ট্রপতি আছেন। আমাদের রাষ্ট্রপতি তো উদার। তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি মাফ করে দিতে পারেন। আমি মনে করি, তিনি মাফ করে দেবেন।’

আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে যে কোনো আদালতের যে কোনো ঘোষিত সাজা ক্ষমা করে দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। আর এ জন্য অপরাধ স্বীকার করে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়।

এই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার আনা নানা অভিযোগ ও বক্তব্য খণ্ডন করেন ওবায়দুল কাদের।

বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, এই মামলার রায় আগেই লেখা আছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই রায় হবে। আজ সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়া বলেন, ‘আদালত রায় দেয়ার বহু আগে থেকেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে আমার জেল হবে। যেন বিচারক নন, ক্ষমতাসীনরাই রায় ঠিক করে দিচ্ছে।’

এর জবাবে কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী বলেছেন এই রায় প্রধানমন্ত্রী লিখে দিয়েছেন। এটা কি আদালত অবমাননা নয়?’

‘তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, আদালত যতি ইতিবাচক রায় দেন তাহলে মেনে নেবেন। না হলে আন্দোলন করবেন এই বক্তব্য রায়ের আগে দেয়া কি আদালত অবমাননা নয়?’

খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারও সমালোচনা করেন কাদের। বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে বিএনপি উত্তপ্ত ও আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

‘এটা তো আগে কখনো হয়নি, এবারই প্রথম। বিএনপি তাদের পুরনো আগুন সন্ত্রাসে ফিরে যেতে উস্কানি দিচ্ছে।’

‘আমাদের দুর্ভাগ্য, কি ধরনের ভবিষ্যৎ রেখে যাচ্ছি! কি ধরনের নোংরা রাজনৈতিক প্র্যাকটিস বিএনপি করছে! পৃথিবীতে আগে কখনও হয়নি। এ ধরনের সংস্কৃতি অনুসরণ করা হলে ফলাফল ভালো হবে না।’

মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল জানিয়ে কাদের বলেন, ‘তিনি তো নিয়মিত আদালতে গিয়েছেন, জামিন নিয়েছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। তাহলে বেগম খালেদা জিয়া কেনো আইনের উর্ধ্বে উঠে যাবেন? তাহলে এই মামলার দায় নেবে ইয়াতিমরা?’

রায়ের দিন রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ এবং সারাদেশে ধরকাপড়ের সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া।

এর জবাবে কাদের বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জনগনের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নিয়েছে।’

এই রায়কে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু বা সাধারণ মানুষের উপর হামলা হলে আওয়ামী লীগ কী ব্যবস্থা নেবে?- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘পুলিশের কাছে কিছু ইনফরমেশন আছে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রশাসন কাজ করছে। কোনো রকম অন্যায় আচরণ সহ্য না করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’

রায়ের দিন নাশকতা ঠেকাতে আওয়া লীগ মাঠে থাকবে কি না-এমন প্রশ্নে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা তো পাল্টাপাল্টি কোন অবস্থায় যাইনি। এটা তো দুর্নীতির বিষয়। এ নিয়ে রাজপথে কী করার আছে?’।

খালেদা জিয়া তার সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। আর এই ঐক্যে আওয়ামী লীগের ‘গণতন্ত্রপন্থীদের’ও কাছে চান তিনি।

একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছে ওবায়দুল কাদেরও। তিনি জনগণের এই ঐক্য চান বিএনপির বিরুদ্ধে।

পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী সবই বিএনপির পক্ষে বলে দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন কাদের। বলেন, ‘আমার কথা হল-তিনি এবং তার নেতারা তাহলে কেন ভয় পাচ্ছেন?’ এসব কথা বলা যে, অন্যায় এটাও কি তিনি বুঝেন না?’।

তিন দিন আগে খালেদা জিয়ার সিলেট সফরের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়া মাজার জিয়ারতের নামে গিয়েছিলেন শোডাউন করতে। তিনি মনে করেছিলেন জনগণের ঢল নামবে। কিন্তু নামেনি। তাই তিনি হতাশ হয়ে রাতেই ফিরে এসেছেন।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আবদুস সোবহান, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here